হাউজিং, এডুকেশন ও ইয়ুথ সার্ভিসে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি

0

সুনসান নিরবতা, কিন্তু হঠাৎ ঝড়, ঠিক এরকমই যেন ৩য় বারের মতো নির্বাহী মেয়র নির্বাচিত হলেন লুতফুর রহমান। ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রথম নির্বাহী মেয়র। পুরো ইউকে’র একমাত্র এথনিক নির্বাচিত মেয়র হিসেবে সেই ২০১০ সালেই ব্রিটিশ প্রভাবশালী রাজনীতিকের তালিকায় আসেন। কিন্তু ২০১৪ সালে ২য় বার নির্বাচিত হওয়ার পর ইলেকশন ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তে ২০১৫ সালে দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হয় তাকে। অবশেষে অন্তত চার দফা তদন্ত আর প্রায় ৪ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে পুলিশ জানায় লুতফুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। আর তাই ২০২২ সালের মে মাসের নির্বাচনে তার ফিরে আসার ব্যতিক্রমী কাহিনী বিবিসিসহ নানা মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায়ও আলোচিত হয়েছে। সাথে নির্বাচিত হলেন ২৪জন কাউন্সিলার। সেই সূত্রে প্রথমবারের মতো কোনো ইন্ডিপেন্ডেন্ট গ্রুপ (আসপায়ার পার্টি) পেলো চুড়ান্ত ম্যাজরিটি। প্রায় ৪০ হাজার ভোটে জিতলেন লুতফুর। দায়িত্ব গ্রহনের এক বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠকদের জন্য একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন লুতফুর রহমান, সাক্ষাতকার নিয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের ইউরোপ ব্যুরো চিফ আ স ম মাসুম।

১. প্রথম ১ বছর কেমন গেলো?

২. গত নির্বাচনে আপনার ও আপনার দলের ফিরে আসা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে ব্রিটিশ গণমাধ্যম থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। নির্বাচনের আগে আপনার নিজের ধারণা কেমন ছিলো নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে?

মেয়র লুতফুর: আমার কার্যক্রম, কমিটম্যান্ট এবং আমাদের প্রতি গ্রাসরুটের সমর্থন নিয়ে যারা ধারণা রাখেন তারা অবশ্য বিস্ময় প্রকাশ করেননি। তারা এমনটি আশাবাদী ছিলেন, যদিও কারো কারো মাঝে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো। আর আমি তো আশা নিয়েই বাসা বেধে ছিলাম। কারন সেই ২০০২ থেকে এ পর্যন্ত কোনো নির্বাচনেই জনগণ আমাকে ফিরিয়ে দেননি। নানা পর্যায়ের প্রপাগান্ডা ও  বিরোধীতার পরও এর আগে দু’বার সাধারণ মানুষের ভোটেই মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। 

৩. প্রথম ১ বছরে আপনার কাজের তালিকায় কোন বিষয়গুলো গুরুত্বের মধ্যে ছিলো?

মেয়র লুতফুর: আপনি জানেন আমরা একটি ম্যানুফেষ্টো বা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচন করেছিলাম। সুবিধা হচ্ছে, একজন নির্বাহী মেয়রের নির্বাচন পূর্বক এজেন্ডা কাউন্সিলের এজেন্ডা হিসেবে বিবেচিত হয়। সেই হিসেবে পুরো কাউন্সিলই ব্যস্ত থাকে এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে। ১ম বছরে আমাদের সাফল্য অনন্য। কিছু কিছু কাজ এবারও আমরা করেছি, যা এই ইউকে বা ইংল্যান্ডে প্রথম এবং একমাত্র আমাদের বারাই করছে। যেমন ইউনির্ভাসিটি গ্রান্টস ও সেকেন্ডারি স্কুলে ইউনির্ভাসেল ফ্রি স্কুল মিল এবং বৃদ্ধদের জন্য ফ্রি হোম কেয়ার। 

১ম বছরের অন্যতম কিছু সাফল্য তুলে ধরতে চাই:

কস্ট অব লিভিং-প্রজেক্টে ৫ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় এবং নতুন পরিকলল্পনা: 

-স্কুল হলিডে থাকাকালে নিম্ম আয়ের পরিবারের স্কুল স্টুডেন্টকে ১০০ পাউন্ড করে প্রদান, রিস্ক অব প্রোভাটি লেভেলে আছেন সেইসব সন্তানদেরও ১০০ পাউন্ড করে প্রদান এবং নতুন করে আরও ১৫ হাজার পরিবারকে অনুদান প্রদানের সিদ্ধান্ত। ৭ হাজার পেনশনারকে ১০০ পাউন্ড করে প্রদান। কাউন্সিল ট্যাক্স ফিজ করা। 

শিক্ষা ক্ষেত্রে অনন্য প্রজেক্ট:

-এ লেভেলে এডুকেশন মেইনটেন্সে এলাউন্স (ইএমএ)
-ইউনির্ভাসিটি গ্রান্ট (প্রতি স্টুডেন্ট ১৫শ পাউন্ড)
-প্রাইমারির পাশপাপাশি সেকেন্ডারিতে ফ্রি স্কুল মিল, যা ইংল্যান্ডে প্রথম 

-হাউজিং ম্যানেজম্যান্ট সার্ভিস ও লেসার সার্ভিস ইনহাউসে নিয়ে আসা এবং সোস্যাল হাউজ নির্মাণে সক্রিয়তা

-বিভিন্ন এলাকায় ফোড স্টোর চালু, স্বল্প আয়ের পরিবারের জন্য নামে মাত্র খরচে খাদ্য পণ্য কেনার সুযোগ।

-৮শ ব্যবসার জন্য ২ মিলিয়ন পাউন্ডের রেইট রিলিফ, এনার্জি সেইভিং প্রজেক্টের জন্য স্মল বিজনেস গ্রান্ট এবং এনার্জি ফান্ড-এর মাধ্যমে বিপন্ন পরিবারকে সহযোগিতা। 

-৪৪ জন নতুন এনফোর্সম্যান্ট অফিসার (থিইও) নিয়োগের উদ্যোগ। সিসিটিভি-তে অতিরিক্ত বিনিয়োগ। অতিরিক্ত পুলিশসহ সামগ্রিক কমিউনিটি সেইফটির জন্য ৪.৪ মি পাউন্ড বাজেট বরাদ্দ। 

-অতিরিক্ত ফ্রি কার পার্কিং সুবিধা (পরিবার এবং মার্কেটের জন্য)
 
-রাবিশ কালেকশনে জরুরি ব্যবস্থাপনা, ৭ মিলিয়ন পাউন্ড খরচে ইলেট্রনিক্স ওয়েস্ট ভিয়েকল এর সূচনা

-মেয়র হিসেবে আমি সপ্তাহে দু’দিন সার্জারি পরিচালনা করছি, মাসে দেখা করছি প্রায় ৫শ মানুষকে।

-কমিউনিটি লেংগুয়েজ সার্ভিস বছরে ৮শ হাজার পাউন্ড বাজেট বরাদ্দ। একটি স্থায়ী প্রজেক্ট হিসেবে পুনরায় চালু হলো এই সার্ভিস। যা বন্ধ করে তুমুলভাবে সমালোচিত হন আগের মেয়র।  

-এছাড়া ইয়ুথ সার্ভিসে ১৩.৭ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ। বন্ধ করা স্থানীয় রাস্তাগুলো খোলার ব্যাপারে কনসালটেশন শেষ করা হয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে কমিউনিটি গ্রান্টস। চালু হয়েছে নতুন টাউন হল। 

৪. আপনার সর্বশেষ বাজেট সম্পর্কে আপনার নিজের মূল্যায়ন কি? নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা, সেকেন্ডারি স্কুল লেভেলে ও ইউনিভার্সিটি লেভেলে শিক্ষা সহায়তা, ইয়ুথ সার্ভিস ইত্যাদি বিষয় অগ্রাধিকার পেয়েছে বাজেটে। তরুণদের প্রাধান্য দেয়ার পেছনে কারন কি ছিলো?

মেয়র লুতফুর: টাওয়ার হ্যামলেটস হচ্ছে সবচেয়ে বেশি তরুণ বয়সী জনসংখ্যার মধ্যে অন্যতম সেরা বারা। এই বারায় স্কুল কলেজ বা ভার্সিটির স্টুডেন্ট এবং তরুণ সমাজের জন্য কার্যকর প্রজেক্ট থাকা জরুরি। তাদেরকে যথার্থ সহায়তা না দিয়ে আপনি শুধু দোষারোপ করতে পারেন না। তারা যাতে পড়াশোনা করে উন্নতি করে, পড়াশোনার পাশাপাশি চাহিদা মতো একটিভিটির সুযোগ পায় সেটি সময়ের দাবি। লেবার মেয়র এসব ক্ষেত্রে উল্লেখ্যযোগ্য কিছুই করেননি, উল্টো ইয়ুথ সার্ভিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিসে এমন কর্তন করেছেন, বলাচলা মেরুদন্ডে আঘাত। তাই দায়িত্ব নিয়ে নতুনভাবে সাজানোর চেষ্টা করছি। 

আপনি ঠিকই বলেছেন, এডুকেশন ও ইয়ুথ সার্ভিসে বিশেষ অগ্রাধিকার ছাড়া আমরা বিশেষ বাজেট বরাদ্দ দিয়েছি কস্ট অব লিভিং প্রজেক্টগুলোর জন্য। আমরা জানি এই কঠিন দিনে, অর্থনীতির এই বিপদের সময়ে আমরা যতোটুকু সম্ভভ নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে থাকতে চাই। তাই তো যারা ফ্রি স্কুল মিল পায় তারা স্কুল হলিডে থাকা কালেও যাতে প্রোটিনযুক্ত খাবার পায় তাই আমরা শিশু প্রতি হলিডে গ্রান্ট হিসেবে ১শ পাউন্ড রেখেছি। ঝুকিপূর্ণ পরিবারগুলোর জন্যও রয়েছে বিশেষ বরাদ্দ। আর প্রায় ৭ হাজার পেনশানারকেও আমরা ১শ পাউন্ড করে দিয়েছি। কাউন্সিল ট্যাক্স ফ্রিজ রেখেছি, সাথে সাথে এ ক্ষেত্রেও ঝুঁকিতে থাকা পরিবারের জন্য রয়েছে বাড়তি সহযোগিতা। সবমিলিয়ে এই ক্ষেত্রে আমাদের বাজেট ৫ মিলিয়ন পাউন্ড। এছাড়া আমরা আরেকটি ফ্যামেলি গ্রান্ট রিলিজ করবো ১৫ হাজার পরিবারের জন্য। 

৫. টাওয়ার হ্যামলেটসে হাউজিং একটা বড় সমস্যা, হাউজিং কর্মকর্তাদের গাফলতির বিষয়ে আপনি নিজে সরব হয়েছেন। এরপরে গত ৬ মাসে দৃশ্যমান কোন উন্নতি হয়েছে কিনা?

মেয়র লুতফুর: বেশির ভাগ কর্মকর্তা যেমন দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন, ঠিক তেমনি কিছু কিছু কর্মকর্তার উপর অভিযোগ থাকতে পারে, আমিও শুনি মাঝেমধ্যে। তাই এটি ছিলো এক জেনারেল কমেন্ট। আমি বিশ্বাস করি পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বিশেষ করে আমি এবং আমাদের ক্যাবিনেট মেম্বার ফর হাউজিং কাউন্সিলার কবির আহমদসহ পুরো টিম কর্মকর্তাদের নিয়ে সক্রিয় রয়েছি। আমাদের যে ৪ হাজার সোস্যাল হাউজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি। চার বছরের মধ্যে এটি নিশ্চিত করতে রাত-দিন সময় দিচ্ছি। এই তিন সপ্তাহে আমরা ২টি লম্বা এওয়ে মিটিং (এক নাগার ৫ /৬ ঘণ্টা) শুধুমাত্র হাউজিং নিয়ে সমন্বিত মিটিং করেছি। সবার কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চাই আগামীর পরিকল্পনার বাস্তবায়নে। আমি জানি হাজার হাজার পরিবার ঘরের জন্য সীমাহীন কষ্ট করছেন। আমি প্রতি মাসে যে ৪০০/৫০০ মানুষের সাথে দেখা করি, তাদের বেশির ভাগও হাউজিং সমস্যা নিয়ে আসেন। মাঝে মধ্যে আমি নিজেও দু:খিত ভারাক্রান্ত হই তাদের সংকট দেখে। আমি জানি, হাউজিং প্রডাকশন বৃদ্ধি ছাড়া এর সমাধান নেই। তবে এর মানে এই নয় যে সবার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। শুধু বলি, আমাদেরকে একটু কাজ করার সুযোগ দিন। ধৈর্য ধরুন, আশাবাদী থাকুন। পর্যায়ে ক্রমে আপনার দিনও আসবে। 

৬. শ্যাডওয়েলের ফ্ল্যাট অগ্নিকাণ্ডে বারবারই কাউন্সিলের গাফিলতির বিষয়টি উঠে এসেছে। আপনি নিজেও এর সমালোচনা করেছেন। অভিযোগ আছে টাওয়ার হ্যামলেটসে এরকম ওভারক্রাউডেড আরও অনেক বাসা-বাড়ি রয়েছে। এসব বিষয়ে আপনারা কোন টাস্কফোর্স গঠন করছেন কিনা? আপনাদের অ্যাকশন প্ল্যান কি?

মেয়র লুতফুর: বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশও তদন্ত করছে। অগ্নিকাণ্ডের জন্য সরাসরি কাউন্সিলের গাফিলতি বলা হয়তো ঠিক হবে না। শুধুমাত্র একটি অভিযোগ আছে এখানে যে মাত্রাতিরিক্ত মানুষ ভাড়া নিয়ে থেকেছেন সেটি নাকি স্থানীয়রা কাউন্সিলকে জানিয়েছেন। আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় এটা শুনিনি, ঘটনার পরই জানলাম। কাউন্সিল এর জন্য একজন এক্সটারনেল অডিটর নিয়োগ করছে। তবে যারা অবৈধ ভাবে থেকেছেন এবং যারা এর ভাড়াটিয়ায় যুক্ত তারা নিজেরাও দায় এড়াতে পারে না। 

এছাড়া শুধু ওভারক্রাউডেড বললে তো ভুল হবে, কারন কাউন্সিল লিস্টেড অনেক পরিবার অভারক্রাউডেড আছেন। তারা বৈধ ভাবেই ওভারক্রাউডেড। কথা হচ্ছে ১ বা ২ বেড রুমের ঘরে অবৈধ ভাবে ৫/১০ জন বা তার চেয়ে বেশি মানুষকে ভাড়া দেয়া এবং এরকম ঝুঁকির সৃষ্টি করা একেবারের অনাকাঙ্খিত। আমরাও শুনতে পাই এরকম অনেক অবৈধ লেন্ডলড আছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।  

৭. ড্রাগ বা মাদক নির্মূলে আপনি আবারও বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন। কাউন্সিল থেকে পাঠানো একটি ডাটায় দেখা গেছে ২০২২ এপ্রিল থেকে ২০২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত  মাদক বিক্রি করা ১ লাখ ৩৭ হাজার পাউন্ড উদ্ধার করা হয়েছে, ৩০৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আর কি পরিকল্পনা আপনার রয়েছে?

মেয়র লুতফুর: আমি যখন ১ম ও ২য় মেয়াদে মেয়র ছিলাম। ‘ডিলার এ ডে’ নামে একটি প্রোগ্রাম বেশ প্রভাব সৃষ্টি করেছিলো। শুধুমাত্র পথেঘাটে ছোটখাটো ড্রাগ ক্রেতা বা বিক্রেতাকে টার্গেট না করে বড় বড় ডিলারদের পাকড়াও করা হতো। আবারো সেরকম সক্রিয়তা চাই। যদিও এই সমস্যা কোথাও পুরোপুরি নির্মূল করা যাবে না। কিন্তু আমাদের প্রয়াস থাকতেই হবে, তাতে সমস্যাটা কমে আসবে। এছাড়া আবারো আমরা সক্রিয় ভাবে চালু করবো ড্রাগ পুনর্বাসন প্রজেক্ট। 

৮. কমিউনিটি সেইফটির জন্য আপনারা প্রচুর বাজেট নিয়ে কাজ করছেন কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে কমিউনিটি সেইফটি নিয়ে তেমন কোন ধারনা নেই। কমিউনিটি সেইফটির বার্তা মানুষের কাছে পৌছাচ্ছে না। এজন্য কি পরিকল্পনা রয়েছে?

মেয়র লুতফুর: আমরা ৪.৪ মিলিয়ন বাজেট বরাদ্দ দিয়েছি কমিউনিটি সেইফটির জন্য। ইতিমধ্যে ৪৪ জন এসফোর্সম্যান্ট অফিসার ( থিইও) নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে রয়েছেন আরও ২৬ জন। অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগে আমরা বাজেট রেখেছি, কিন্তু পুলিশ পেতে হবে ম্যাট থেকে। আমরা অনেক দিন থেকে অপেক্ষায় আছি। পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন বাস্তবে পুলিশ সংখ্যা কম, কিন্তু ধাপে ধাপে আমাদের চাহিদা পূরণ করবেন তারা। একসময় একসাথে ৪০জন অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগ করেছিলাম। এখন নতুন করে হয়তো ১০ জন ১০জন করে পাবো। সাবেক মেয়র অতিরিক্ত পুলিশ একেবারে কমিয়ে ফেলেন। বর্তমানে আছেন ১২জন। হ্যা কমিউনিটি সেইফটি শুধুমাত্র পুলিশ আর আইন দিয়ে রক্ষা হবে না, সাথে সাথে দরকার সমাজ সচেতনতা। আর আমাদের পরিবার, সংগঠন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো শান্তিপূর্ণ ও অপরাধ মুক্ত সমাজ নিয়ে কথা বলতে হবে। তরুণদের, আমাদের সন্তানদের সুপথে ধরে রাখতে দায়িত্ব নিতে হবে। 

৯. টাওয়ার হ্যামলেটসে যতো ধরনের অপরাধ সংগঠিত হয় তার বেশিরভাগই রাত ১১টার পর, অথচ কমিউিনিট সেইফটি টিম রাত ১০টার পর এ্যাক্টিভ থাকে না। এক্ষেত্রে ক্রাইম ট্যাকল দেয়ার জন্য আপনাদের পরিকল্পনা কি?

মেয়র লুতফুর: কমিউনিটি সেইফটির বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম রয়েছে। যেমন রেপিড রেসপন্স টিম। এন্টি সোস্যাল বিহেভিয়ার টিম। তারা প্রয়োজনে রাতেও কাজ করেন। তবে হ্যা এনফোর্স অফিসার একেবারে কমিয়ে ফেলায় হয়তো সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন হচ্ছে না। আমরা যে সংখ্যায় নিয়োগ করছি, আমি চাইবো রাতের ঝুঁকিপূর্ণ সময়েও সক্রিয়তা। আমরা বিষয়টি দেখবো। ধন্যবাদ। 

১০. হাউজিং ক্রাইসিস মোকাবিলা করার জন্য আপনার আগামী ৩ বছরে কতগুলো বাড়ি নির্মাণের প্রক্রিয়া রয়েছে?

মেয়র লুতফুর: ৪ বছরে সর্বমোট ৪ হাজার ঘরের টার্গেট। এর মধ্যে যেমন থাকবে কাউন্সিল মালিকানাধীন কিছু ১০০ পার্সেন্ট সোস্যাল হাউস তেমনি পার্টনার ও ডেভেলাপারদের মাধ্যমে আসবে বড় অংশ। এর জন্য আমি সবসময় কথা বলছি, মিটিং করছি সংশ্লিষ্টদের সাথে। ভিজিট করছি বিভিন্ন প্রস্তাবিত এলাকা। 

১১. টাওয়ার হ্যামলেটসের মানুষের দাবি একটি বড় কার পার্কের। এই বিষয় নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি?

মেয়র লুতফুর: একটি ইনার সিটি ছোট্ট বারা আর প্রায় সাড়ে ৩শ হাজার মানুষের বাস। এছাড়া প্রতিদিন আসা যাওয়া আরও লাখো মানুষের। সবখানেই ঘর-বাড়ি আর ব্যবসা-বাণিজ্য। সামান্য কিছু গ্রিন স্পেইস। আপনারা বলুন কোথায় করবো কার পার্ক। এখন সিটির ভেতরেও বড় বড় ডেভেলাম্যান্ট হয়, কিন্তু গ্রিন প্রায়রিটির কারনে আলাদা কার পার্কের কথা ভাবা হয় না। ভাবা হয় সাইকেলের কথা। এছাড়া টাওয়ার হ্যামলেটস হচ্ছে সবচেয়ে বেশি পাবলিক ট্রান্সপোর্টের সুবিধা সমৃদ্ধ অন্যতম বারা। ডিএলআর থেকে শুরু করে রয়েছে এলিজাবেথ লাইনও। 

১২. এবার একটু রাজনৈতিক বিষয়ে ফিরে আসি। আপনার দীর্ঘ দিনের সহচর অহিদ আহমেদ কেবিনেট থেকে পদত্যাগ করেছেন। বাইরে গুঞ্জন রয়েছে আপনি তাকে ফেরানোর জন্য কোন উদ্যোগ নেননি। গুঞ্জন আছে আপনার দল থেকে আরও ২/৩ জন সরে দাঁড়াবেন। সবাইকে বিস্মিত করে দিয়ে দুর্দান্ত একটি নির্বাচন করে অসাধারণ কামব্যাকের ১ বছরের মধ্যে সতীর্থের সরে দাঁড়ানো আপনার রাজনৈতিক জীবনে কতটুকু প্রভাব ফেলবে?

মেয়র লুতফুর: আমি এ নিয়ে এখনো পাবলিকলি কোনো মন্তব্য করিনি। এখনো করতে চাই না। সবার প্রতি সম্মান রাখতে চাই। আপতত কথা বলে কথা বাড়াতে চাই না। তবে সাধারণভাবে একটি কথা সবাই বুঝবেন, আমাদের ২৪জন কাউন্সিলার। কিন্তু ক্যাবিনেট পজিশন মাত্র ৯টি। স্পিকার একটি এবং ডিপুটি মেয়র একটি। এখন অনেকেই আশা করতেন পারেন নানা পজিশন নিয়ে, দায়িত্ব নিয়ে। একসাথে এক বছরে সবাইকে খুশি করা অসম্ভভ। তবে যারা সাধারণ মানুষের ভোটকে, ম্যান্ডেটকে প্রকৃত অর্থে সম্মান করেন এবং প্রগ্রেসিভ এজেন্ডা ও একশনে বিশ্বাস করেন তারা তো একটি গ্রুপের প্রতি, এর নেতৃত্বের শুধু অস্থা রাখেন না, তারা দারুনভাবে সহযোগিতা করেন। দিনে দিনে সেইসব সব জনমুখী রাজনীতিককে চিনতে পারে মানুষ। তিনি রাজনীতির প্রতিপক্ষ কেউ হতে পারেন, আবার হতে পারেন একেবারে তরুণ এক সম্ভাবনা। 

১৩. সামনের ৩ বছর কী পরিকল্পনা টাওয়ার হ্যামলেটস নিয়ে?

মেয়র লুতফুর: আপনি নিশ্চয় দেখেছেন নির্বাচনের আগে আমাদের ১২৩টি প্রতিশ্রুতি সমৃদ্ধি একটি সুন্দর প্রকাশনা ছিলো। সেটি এখন পাবলিক ইনফরম্যাশন। আমরা চাই এই প্রতিশ্রুতির যথাসম্ভব বাস্তবায়ন। 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here