হংকংয়ে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে মানুষের ঢল, বিক্ষোভে চীনের সতর্কতা

0
হংকংয়ে অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে মানুষের ঢল, বিক্ষোভে চীনের সতর্কতা

হংকংয়ের বেশ কয়েকটি সুউচ্চ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের জন্য শ্রদ্ধা জানাতে রবিবার এক হাজারের বেশি শোকার্ত মানুষ জড়ো হন। এই জমায়েতের প্রেক্ষাপটে চীন সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, আগুনের ঘটনায় চীন-বিরোধী কোনও বিক্ষোভ হলে জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করা হবে। 

গত ৭৫ বছরের মধ্যে শহরটিতে এটিই সবচেয়ে সবচেয়ে প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ড। খবর অনুযায়ী, এ ঘটনায় নিহত হয় অন্তত ১৪৬ জন। এখনো নিখোঁজ রয়েছে বহু মানুষ। হাজার হাজার বাসিন্দাকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

গত সপ্তাহে বুধবার বিকেলে ৮টি ৩২ তলাবিশিষ্ট ভবন নিয়ে গঠিত ওয়াং ফুক কোর্টে আগুন লেগে দ্রুত কমপ্লেক্সে ছড়িয়ে পড়ে। নিহত হয় অন্তত ১৪৬ জন। প্রায় দুইদিনের চেষ্টায় শুক্রবার আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন লাগার কারণ এখনও তদন্তাধীন। আগুন লাগার পর ঘটনাস্থলের ফায়ার অ্যালার্ম ঠিকঠাক কাজ করেনি বলে ভাষ্য কর্তৃপক্ষের।

নির্মাণ কোম্পানির দায়িত্বে অবহেলা এবং অনিরাপদ নির্মাণসামগ্রীর কারণে আগুন লেগেছে এমন অভিযোগে জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকেই একে ‘মানবসৃষ্ট দুর্যোগ’ বলছেন।

অগ্নিকাণ্ডের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি পোস্টে লেখা ছিল: ‘এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়’। ভবনের সংস্কার কাজের সঙ্গে যুক্ত তিনজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুর্নীতির অভিযোগেও তদন্ত শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। এখনও ৪০ জনের বেশি নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ওয়াং ফুক কোর্টে অগ্নিদগ্ধ কমপ্লেক্সের পাশের খালের ধারে এক কিলোমিটারের বেশি লম্বা সারিতে সাদা ফুল হাতে দাঁড়িয়েছেন শোকসন্তপ্ত মানুষেরা।

তারা নিহতদের স্মরণে ফুল দিচ্ছেন। কেউ কেউ ফুলের সঙ্গে নিহতদের উদ্দেশে লেখা চিরকুটও জুড়ে দিচ্ছেন।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত সাতটি টাওয়ার থেকে ঘটনার চার দিন পরও ধোঁয়ার গন্ধ আসছে।

২৮ বছর বয়সী জোই ইয়্যুং আগুনে নানির ফ্ল্যাট পুড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, “আমি এটা মেনে নিতে পারছি না। আজ বাবা ও পরিবারের সঙ্গে এসেছি ফুল দিতে। কিছু পাওয়ার দাবি জানাচ্ছি না, অন্তত মৃতদের পরিবারের জন্য বিচার চাই। যাদেরকে হারিয়েছি, তাদের জন্য।”

নিহতদের মধ্যে সাতজন ইন্দোনেশীয় গৃহকর্মী ও একজন ফিলিপিনো গৃহকর্মী। বহু অভিবাসী শ্রমিক এখনও নিখোঁজ। রোববার সকালে হংকংয়ে ফিলিপিনো সম্প্রদায়ের এক খোলা প্রার্থনা সভায় শত শত মানুষ অংশ নেয়।

নির্মাণকাজ তদারকিতে অবহেলা এবং অগ্নিকাণ্ডের স্বাধীন তদন্তের দাবিতে অনলাইন আবেদন করা মাইলস কওয়ান (২৪)-কে শনিবার পুলিশ আটক করেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তি।

তবে রয়টার্স তার গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়। এ বিষয়ে হংকং পুলিশও কোনও মন্তব্য করেনি।

অনলাইনের ওই আবেদনে শনিবার বিকাল পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি স্বাক্ষর পড়েছে। পরে তাই পো-এর এক প্রবাসী বাসিন্দা একই দাবিতে দ্বিতীয় আবেদন করেন।

এতে রোববার পর্যন্ত ২৭০০ জনের বেশি স্বাক্ষর পড়ে। আবেদনে বলা হয়, সরকারকে হংকংবাসীর কাছে প্রকৃত ও স্পষ্টভাবে জবাবদিহি করতে হবে।

চীন সীমান্তের কাছে অবস্থিত সাতটি আবাসিক টাওয়ারে এই বিশাল অগ্নিকাণ্ড হংকংকে হতভম্ব করেছে। কর্তৃপক্ষ ফৌজদারি ও দুর্নীতি তদন্ত শুরু করেছে।

চীনের জাতীয় নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ বলেছে, অগ্নিকাণ্ডের বিপর্যয়কে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালের বিক্ষোভের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দুর্যোগকে অজুহাত করে হংকংকে অস্থিতিশীল করতে চাওয়া চীন বিরোধীদের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেইজিং।

বলা হয়েছে, যে পদ্ধতিই ব্যবহার করা হোক না কেন অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টাকারীদের জবাবদিহি করতে হবে এবং কঠোর সাজা পেতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here