ক্রিকেট মাঠের একটি মুহূর্ত নিয়ে রীতিমতো উত্তাল গোটা দুনিয়া! অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসার মিচেল স্টার্ক রবিবার (১৯ অক্টোবর) পার্থে অনুষ্ঠিত ম্যাচে এমন এক বল করেছেন, যার গতি দেখে চোখ কপালে উঠেছে সবার- ঘণ্টায় ১৭৬.৫ কিলোমিটার! টিভি সম্প্রচারে এই গতির ডেলিভারি দেখেই শুরু হয় জল্পনা: তবে কি দুই দশক পর ভেঙে গেল শোয়েব আখতারের সেই ঐতিহাসিক বিশ্বরেকর্ড?
পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিই, ২০০৩ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬১.৩ কিমি/ঘণ্টা গতিতে বল ছুড়ে ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’ শোয়েব আখতার গড়েছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে দ্রুত গতির ডেলিভারির রেকর্ড। সেই রেকর্ড আজও অক্ষত ছিল… যতক্ষণ না স্টার্কের এই ‘অসাধারণ’ গতি টিভি পর্দায় ভেসে উঠল।
তবে কি সত্যিই বিশ্বরেকর্ড?
উত্তরটা হলো—না, মোটেই না। স্টার্কের সেই ডেলিভারি বাস্তবে এত দ্রুত ছিল না। পরে জানা যায়, এটি ছিল সম্প্রচারের এক মারাত্মক প্রযুক্তিগত ত্রুটি। মূলত গ্রাফিক্স বা গতি পরিমাপক যন্ত্রের কোনো বিভ্রাট থেকেই এই ভুল তথ্য দেখা গেছে।
বিশ্বস্ত অন্যান্য সম্প্রচার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সেই ডেলিভারির প্রকৃত গতি ছিল ঘণ্টায় ১৪০.৮ কিমি- যেটি স্টার্কের পক্ষে একদমই স্বাভাবিক।
তাহলে বিভ্রান্তি কোথায়?
১৭৬.৫ কিমি/ঘণ্টার মতো গতি কেবল অবিশ্বাস্যই নয়, ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে তা প্রায় অসম্ভব। যদি সত্যিই এই গতি হত, তবে ব্যাটার রোহিত শর্মার প্রতিক্রিয়াতেও সেটা স্পষ্টভাবে বোঝা যেত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, রোহিত অনায়াসে বলটি অনসাইডে ঠেলে ১ রান নিয়ে নেন। এমন ডেলিভারির বিপক্ষে এতটা স্বাচ্ছন্দ্য সম্ভব নয়।
ভারতের ‘নিউজ ১৮’ এক প্রতিবেদনে জানায়, মানুষের শরীরের কাঠামোগত সীমাবদ্ধতায় ক্রিকেটে এমন গতি অর্জন করা প্রায় অসম্ভব। বেসবলে যেখানে হাতের নড়াচড়া তুলনামূলক সহজ, সেখানেও সর্বোচ্চ গতি থাকে ১৭৪-১৭৭ কিমি/ঘণ্টার মধ্যে। ক্রিকেটে আরও জটিল বোলিং অ্যাকশনের কারণে তা সম্ভব নয় বললেই চলে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, এটি ছিল রাডারের মিসঅ্যালাইনমেন্ট, সেন্সরের ত্রুটি বা গ্রাফিক্স জনিত মানবীয় ভুল। নতুন কোনো বিশ্বরেকর্ড হয়নি। অতএব, আপাতত শোয়েব আখতারের সেই ঐতিহাসিক ১৬১.৩ কিমি/ঘণ্টার ডেলিভারিই এখনো রেকর্ড হিসেবে রয়ে গেল।