সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুদের পুনরুত্থান, ফের জাহাজে চোট

0
সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুদের পুনরুত্থান, ফের জাহাজে চোট

দীর্ঘ বিরতির পর সোমালি জলদস্যুদের হামলার আশঙ্কার মধ্যেই বৃহস্পতিবার সোমালিয়া উপকূলের কাছে এক জাহাজে হামলার ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাজ্যের সামরিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মেশিনগান ও রকেট চালিত গ্রেনেড (আরপিজি) ব্যবহার করে আক্রমণকারীরা জাহাজটিতে আরোহণ করেছে। 

ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ইউকে মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস সেন্টার এক সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, একটি জাহাজ থেকে খবর এসেছে যে সেটির পিছনের দিক থেকে একটি ছোট নৌযান তাদের কাছাকাছি আসে। এরপর সেটিতে ছোট অস্ত্র গুলি ও আরপিজি ছোঁড়া হয়। তারা ওই অঞ্চলের জাহাজগুলোকে সাবধানতার সঙ্গে যাতায়াত করার পরামর্শ দিয়েছে।

বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা অ্যামব্রে জানিয়েছে, হামলাটি মাল্টার পতাকাবাহী একটি ট্যাংকারকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে, যা ভারতের সিক্কা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানের দিকে যাচ্ছিল। অ্যামব্রের ধারণা, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ওই অঞ্চলে সক্রিয় সোমালি জলদস্যুরাই এই হামলা চালিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, তারা তাদের অভিযানের ঘাঁটি হিসেবে সম্প্রতি ছিনতাই করা একটি ইরানি মাছ ধরার নৌকা ব্যবহার করছে, যদিও ইরান নৌকাটি ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করেনি।

বৃহস্পতিবার আক্রান্ত জাহাজটির বিবরণী হেলাস অ্যাফ্রোডাইটের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। যা হামলার সময় গতি কমিয়ে তার পথ পরিবর্তন করেছিল। এই জাহাজটির মালিক ও পরিচালকদের সাথে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

অপর একটি সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংস্থা, ডায়াপ্লাউস গ্রুপ জানিয়েছে, আক্রান্ত ট্যাংকারটিতে ২৪ জন নাবিক ছিলেন। যারা নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে জাহাজের সিটাডেল-এ আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে সংস্থাটি নিশ্চিত করেছে, জাহাজটিতে কোনো সশস্ত্র নিরাপত্তা দল ছিল না।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সোমালি জলদস্যুতা-বিরোধী মিশন অপারেশন আটলান্টা সাম্প্রতিক আরও কিছু জলদস্যু হামলার জবাব দিয়েছে। তারা আগেই সতর্ক করেছিল যে সোমালিয়া উপকূলের কাছে একটি জলদস্যু দল সক্রিয় রয়েছে এবং হামলা প্রায় নিশ্চিত।

বৃহস্পতিবারের এই হামলার আগে কেম্যান দ্বীপপুঞ্জের পতাকাবাহী স্টোল্ট সাগাল্যান্ড নামের আরেকটি জাহাজও জলদস্যুদের হামলার শিকার হয়েছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাহিনী জানিয়েছে, সেই হামলায় জাহাজটির নিজস্ব সশস্ত্র নিরাপত্তা দল এবং আক্রমণকারীদের মধ্যে গুলি বিনিময়ও হয়েছিল।

২০১১ সালে সোমালি জলদস্যুতার ঘটনা শীর্ষে পৌঁছেছিল, যখন মোট ২৩৭টি হামলার খবর পাওয়া গিয়েছিল। ওশেনস বিয়ন্ড পাইরেসি মনিটরিং গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, সে বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে এর ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে শুধু মুক্তিপণ হিসেবেই ১৬০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক নৌ টহল জোরদার এবং সোমালিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের স্থিতিশীলতার কারণে এই হুমকি কমে এলেও ২০২৩ সালের শেষ দিক থেকে সোমালি জলদস্যুতা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

ট্র্যাভেল রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সংস্থা সোলেস গ্লোবাল রিস্ক জানিয়েছে, জলদস্যুতা-বিরোধী টহল কমানো এবং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করতে সামরিক সম্পদ স্থানান্তর করার ফলেই এই অঞ্চলে হামলা বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মেরিটাইম ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এ পর্যন্ত সোমালিয়া উপকূলে সাতটি হামলার খবর পাওয়া গেছে এবং একাধিক মাছ ধরার নৌকা জলদস্যুদের হাতে আটক হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here