দিনাজপুরের দুই উপজেলার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা আত্রাই নদী। একটি সেতুর অভাবে দিনাজপুর সদরের বুড়ির হাট-চিরিরবন্দরের সাইতাড়ার মাঝে নদীর ঘাট দিয়ে পারাপারে আশপাশের হাজারও মানুষের ভোগান্তি এখন নিত্যদিনের। ভোগান্তি বর্ষায় যেমন, শুষ্ক মৌসুমেও তেমন।
বর্ষাকালে নদী বিমূর্ত ধারণ করে নদীর পার ভেঙে দিলেও শুষ্ক মৌসুমে বালুর চর আর কিছু স্থানে থাকে পানি। তাই বর্ষকালে নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে ওই নদীর পানির উপর স্থানীয়দের সমন্বয়ে গড়া বাঁশের সাঁকোই হয় তখন একমাত্র পারাপারের মাধ্যম। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পার হলেও তাদের যেন কাটছে না এই ভোগান্তি। তাই ওইসব এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি একটি সেতুর। অনেকে আশ্বাস দিলেও আজও কোনো অগ্রগতি নেই বলেই জানান স্থানীয়রা।
নদীর ঘাটের পাশে বসে বুড়ির হাট। নদীর দুইপারের হাজার হাজার মানুষ এই হাটে কেনা-বেচা করে। এছাড়াও নদীর দুই পারের রানীগঞ্জসহ কয়েকটি হাট-বাজার বসে। এই বুড়ির হাটের পাশে নদীর ঘাট ব্যবহার করে দিনাজপুর সদরের হরিরামপুর, ঝানঝিরা, পূর্ববীরগাঁ, পারগাঁ, মাধবপুর, রানীগঞ্জ, চাদগঞ্জসহ ১০ গ্রাম এবং ওপারের চিরিরবন্দর উপজেলার খোচনা, শংকরপুর, ওকরাবাড়ী, সাইতাড়া, ঘন্টাঘর, বারলবাজারসহ ১০ গ্রামের মানুষ এই নদীর এই ঘাট ব্যবহার করেন। এছাড়াও এ ঘাট দিয়ে নদী পারাপার হয় পার্বতীপুর উপজেলারও কয়েক গ্রামের মানুষ।
ফাজিলপুর ইউপির ৭, ৮, ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার সুমিতা রানী রায় জানান, প্রতিদিন নদী পারাপারে হাজারও মানুষের ভরসা বর্ষায় নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে বুড়ির হাট নদীর ঘাটের উপর বাঁশের সাঁকো। শুষ্ক মৌসুমে নদীর দুই পাশের মাটির নিচু রাস্তা পেরিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হতে নিত্যদিনের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে কৃষক, ব্যবসায়ী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এর উপর দিয়ে ভারী যানবাহন, মাইক্রোবাস না চললেও শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনে অটোচার্জার বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হয়।
সাইতাড়া ইউপির চাষী এনামুল হকম সবুজ রায়, হবিবর রহমানসহ অনেকে জানান, আমাদের দুর্ভোগ ছাড়ে না। উভয় দিকের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে নদী পারাপারে চরম দুর্ভোগের শিকারও হয় আবার বাজার মূল্য না পাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
দিনাজপুরের ফাজিলপুর ইউপির ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, বর্ষার সময় নৌকা কিংবা শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে কৃষক, ব্যবসায়ী, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। গর্ভবতী নারী, শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও অসুস্থ রোগীদের পারাপার করা যেমন ভীতিকর তেমনি খুব কষ্ট ও ঝুঁকিপূর্ণ। এসব অঞ্চলের জীবনযাত্রার মান পাল্টাতে হলে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করতে অবশ্যই এখানে একটি সেতুর জরুরি প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে একটি সেতু করার জন্য এলজিইডিকে জানানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তিন বছর আগে এই বুড়ির ঘাটে সরকারিভাবে একটি জরিপ এবং মাটি পরীক্ষা করা হয়েছিল। এরপর আর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
দিনাজপুর সদর উপজেলা প্রকৌশলী নিতিশ কুমার জানান, আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।