সামনে নির্বাচন। আর এই নির্বাচন ঘিরে নতুন নতুন মাদক ছড়িয়ে দিতে তৎপর হয়ে উঠেছে একটি চক্র। এক সময় ভারতের তৈরি ফেনসিডিল বাংলাদেশের যুব সমাজকে ধ্বংস করতে ঢুকত। পরে এই জায়গা দখল করে নেয় ইয়াবা। এখন এই দুই মাদকের চেয়ে আরও ভয়ংকর মাদক দেশে ঢুকছে। এ ধরনের তিনটি তরল মাদকের খোঁজ পেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা। যেগুলোর কারখানা বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতের অন্তত ১০ জেলায়, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এরই মধ্যে সংস্থাটির গোয়েন্দা শাখা বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদন দিয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, ফেনসিডিল সাধারণত ঠান্ডার সিরাপ হিসেবে বাজারজাত করা হয়। কিন্তু কোডিন ফসফেট মিশিয়ে এটিকে মাদক হিসেবে তৈরি করা হয়। এখন এই কোডিন ফসফেটের সঙ্গে আরও উপাদান মিশিয়ে নতুন মাদক (সিরাপ) তৈরি করা হচ্ছে।
নেশাজাতীয় নতুন এই সিরাপগুলো হলো-‘ব্রনোকফ সি’, ‘চকো প্লাস’ ও ‘উইন কোরেক্স’। এগুলোর মধ্যে ব্রনোকফ সি নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন অধিদপ্তর। নেশাজাতীয় উপাদান থাকায় কাশির এসব সিরাপ ইতোমধ্যে ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো বাংলাদেশে ঢুকানো হচ্ছে।
গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী, ভারতের সীমান্তবর্তী ১০টি জেলায় কমপক্ষে ৬২টি কারখানায় নেশাজাতীয় নতুন তিন ধরনের সিরাপ তৈরি হচ্ছে। এসব কারখানা আছে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা, নদীয়া, মালদা, মুর্শিদাবাদ, সিপাহীজলা, বিলোনিয়া, ত্রিপুরার পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চল, শান্তিরবাজার ও মেঘালয়। এসব কারখানাকেন্দ্রিক ৩৭৪ ভারতীয় মাদক কারবারি বাংলাদেশে মাদক চোরাচালান করে। এসব মাদক ঢুকছে সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া দিয়ে।
নতুন মাদকের বিষয়ে খোঁজখবর রাখা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বগুড়া কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহা. জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন তিনটি মাদক দেশের মধ্যে ঢুকছে। এগুলোর দেশে প্রবেশ বন্ধে প্রথমে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সতর্কতা প্রয়োজন। সীমান্তে ঠেকাতে পারলে দেশে এসব মাদক নিয়ন্ত্রণ অনেক সহজ হবে। তিনি বলেন, ভারতের ল্যাবোরেট ফার্মাসিউটিক্যালস নামের প্রতিষ্ঠান সিরাপগুলো কাশির ওষুধ হিসেবে প্রস্তুত করে। নেশাজাতীয় উপাদান ব্যবহারের কারণে ভারতেই এগুলো নিষিদ্ধ। সেগুলোই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ছড়াচ্ছে। বিজিবি ৫৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে বিজিবি জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। নতুন মাদক নিয়েও আমরা সতর্ক আছি এবং মাদক প্রতিরোধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’
রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলাম বলেন, নতুন মাদক সম্পর্কে এখনো তারা কোনো তথ্য পাননি। তবে যে নামেই হোক, মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে পুলিশ টহল আগের তুলনায় বাড়িয়েছে।

