সিডনিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাইদের গ্র্যান্ড রিইউনিয়ন

0

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের সংগঠন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া তাদের প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পূর্তি ও পুনর্মিলনী উপলক্ষে আয়োজন করেছিল এক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের—‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি নাইট – গ্র্যান্ড রিইউনিয়ন ২০২৫’।

গত ১০ মে শনিবার, সিডনির গ্রানভিলের গ্র্যান্ড রয়্যাল হলে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠান ঘিরে সিডনিজুড়ে ছিল ব্যাপক উৎসাহ। অনুষ্ঠানের কয়েক সপ্তাহ আগেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। প্রায় ৪০০ জন ধারণক্ষমতার হল পূর্ণ হওয়ায় অনেকে অংশ নিতে পারেননি।

অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আগত নব্বই দশকের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আগুন ও তরুণ প্রজন্মের শিল্পী সিঁথি সাহা।

প্রবাসে থাকা ঢাবিপ্রেমী অ্যালামনাইরা পরিবারসহ অংশ নেন এই আয়োজনে। তাঁদের সরব উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি পরিণত হয় এক আনন্দঘন উৎসবে।

প্রবেশদ্বারে দর্শনার্থীদের চোখে পড়ে পরবর্তী প্রজন্মের পৃথ্বীর পরিকল্পনায় ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে কানিতার নিখুঁত সজ্জায় তৈরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল ও অপরাজেয় বাংলার প্রতিকৃতি এবং ৩৬০ ডিগ্রি ফটো বুথ।

প্রতিটি অতিথিকে দেওয়া হয় নেমকার্ড, একটি স্মারক ক্রেস্ট এবং ঢাবি অ্যালামনাই চারুশিল্পী রফিকুর খানের করা প্রচ্ছদসহ স্মরণিকা “নানান রঙের দিনগুলি”।

সন্ধ্যা ৬টায় নার্গিস বানুর সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক পর্ব শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক দলের নেতৃত্বে দুই দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান।

অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে সোমাইতা, নোরা ও নাঈফা। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন তামিমা শাহরিন, মাসুদ মিথুনসহ আরও অনেকে। তবলায় ছিলেন সাকিনা।

আদিবাসীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখে ছোট্ট হাফিদ আবিয়ান।

এরপর একে একে মঞ্চে পারফর্ম করেন তামিমা, মাসুদ, ঈষিকা, তারা, লাবণ্য, এবং সিডনির বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী অর্পিতা সোম চৌধুরী। তার নজরুল সংগীতের সাথে নৃত্য মুগ্ধ করে দর্শকদের।

বিশিষ্ট সরোদ বাদক তানিম হায়াত খান রাজিত তাঁর পরিবেশনায় আনেন অপার্থিব আবহ।

এই পর্বটির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সাংস্কৃতিক সম্পাদক নুসরাত হুদা কান্তা।

আনুষ্ঠানিক পর্বে মঞ্চে আসেন সংগঠনের সভাপতি কামরুল মান্নান আকাশ, সাধারণ সম্পাদক লিংকন শফিকউল্লাহ এবং সম্মানিত অতিথি ড. জাকিয়া হোসেইন।

সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমরা সবাই একই পরিচয়ে গর্বিত—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্তান।” তিনি নবীন ও প্রবীণদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

তিনি কার্যকরী পরিষদের সদস্যদের নাম পড়ে শোনান এবং বিশেষ ধন্যবাদ জানান বাজেট কমিটির আহসানুল হাসান হাদী, জাহিদ মাহমুদ, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক লিংকন শফিকউল্লাহকে।

ড. জাকিয়া হোসেইন তাঁর বক্তব্যে বলেন, “প্রতিষ্ঠালগ্নের সেই দিনগুলো আজও মনে পড়ে। এই সফল আয়োজনের জন্য আমি বর্তমান পরিষদকে অভিনন্দন জানাই।” তাঁকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

সাধারণ সম্পাদক লিংকন শফিকউল্লাহ জানান, একযোগে সবার সহায়তা ছাড়া এমন আয়োজন সম্ভব ছিল না। তিনি স্পন্সরদের নাম ঘোষণা করেন এবং সভাপতির মাধ্যমে তাঁদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।

পরবর্তীতে শুরু হয় মূল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সিঁথি সাহা পরিবেশন করেন জনপ্রিয় সব গান। এরপর মঞ্চে আসেন আগুন।

“ভালো আছি ভালো থেকো”, “পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া রে”, “ও আমার বন্ধু গো”—সহ একাধিক জনপ্রিয় গান পরিবেশন করেন তিনি।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে আগুন বলেন, “এটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা পারফর্মেন্স। এমন শ্রোতাদের গান শোনাতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ।”

শেষ গান হিসেবে গেয়ে শোনান আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের দেশাত্মবোধক গান ‘একাত্তরের মা জননী’, এরপর ‘আমার সোনার বাংলা’। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শেষ হয় রাত ১২টা ১ মিনিটে অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানের ফ্লোর ম্যানেজমেন্টে ছিলেন লিংকন শফিকউল্লাহ, স্টেজ ম্যানেজমেন্টে জাহিদ মাহমুদ। সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারে আত্তাবুর রহমান, যন্ত্রশিল্পীরা ছিলেন সোহেল, আসাদুজ্জামান খালিদ, শাহরিয়ার জামাল, রাস্নান জামান ও আলী কাউসার।

ফটোগ্রাফি করেন জাহাঙ্গীর এবং ভিডিও ধারণ করেন এডওয়ার্ড অধিকারী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here