অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি উঠেছে।
সিডনিতে ২০ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ অস্ট্রেলিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া যুবলীগের যৌথ উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি আব্দুল জলিল।
সভার শুরুতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন, বাইবেল ও গীতা থেকে পাঠ করেন যথাক্রমে বশীর আহমেদ, পল মধু এবং নির্মাল্য তালুকদার। সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পচাত্তরের ১৫ আগস্টের সকল শহীদ, মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ এবং একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং সকল শহিদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
সভায় বক্তব্য রাখেন ওবায়েদুল হক, ড প্রদীপ মাহবুব, অস্ট্রেলিয়া যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান শামীম, ড. শাখাওয়াৎ নয়ন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শফিউজ্জামান, অপু সারোয়ার, মহিউদ্দিন কাদের, খন্দকার তারিক হাসান লিপু, শেখ মশিউর রহমান হৃদয়, অভিজিৎ বড়ুয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা কায়সার আহমেদ, নেহাল নিয়ামুল বারী, অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন প্রধানীয়া, এমদাদ হক, বিশিষ্ট কলামিস্ট অজয় দাশ গুপ্ত, ডা. লাভলী রহমান, ড. নূরুর রহমান খোকন, বাংলাদেশ কমিউনিটির শ্রদ্ধাভাজন নেতা গামা আব্দুল কাদির, সিডনি বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসের কনসাল জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. দীপু মনি পচাত্তরের ১৫ আগস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধু নিজেকে বিশ্বের শোষিত-নিপীড়িত মানুষের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সাম্রাজ্যবাদি শক্তি তার এই উত্থান রহিত করার জন্য তাকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা আজও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্রকারীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
এসময় তিনি দলের মধ্যে সবাইকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে তোলার আহ্বান জানান।
দীপু মনি বলেন, দলে অনুপ্রবেশকারীদের রুখতে হবে। দলের মধ্যে নিজেদের গ্রুপের পাল্লা ভারী করার জন্য অনেকেই এসব অনুপ্রবেশকারীদের সুযোগ করে দেয়। এইসব অনুপ্রবেশকারীরা দলে ঢুকে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে পড়ে থেকে সময়-সুযোগ মতো দলের ক্ষতি করে।
তিনি বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, “আমরা কী ভুলে যাব ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট, আহসানউল্লাহ মাস্টার এমপি-মঞ্জুরুল ইমাম-হুমায়ুন কবীর বালুসহ অসংখ্য হত্যাকাণ্ডের কথা? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আরও উন্নয়ন দেখতে চাই। আমরা আর বিএনপি-জামায়াতের দুঃসহ বিভীষিকাময় দিনগুলোতে ফিরে যেতে চাই না। আমরা আর চাই না দেশে একদিনে বিভিন্ন স্থানে পাঁচশ’ বোমা বিস্ফোরিত হোক।”
সভাস্থলে পিনপতন নীরবতার মধ্যে উপস্থিত দর্শকেরা চমৎকার শব্দচয়নে সমৃদ্ধ ডা. দীপু মনির তথ্য সমৃদ্ধ বক্তৃতা শুনছিলেন।
সভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও রাজশাহী গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তা ড. প্রদীপ মাহবুব বলেন, আওয়ামী লীগকে প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। বাইরের থেকে ভাড়া করে আনা হাইব্রিডদের আমরা দলে দেখতে চাই না।
অস্ট্রেলিয়া যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান শামীম বলেন, বিদেশি শক্তির হুমকির কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কখনও মাথা নত করেননি। তার কন্যা শেখ হাসিনাও কারও হুমকির কাছে নতি স্বীকার করেন না। কারও রক্তচক্ষুকে তিনি পরোয়া করেন না। কেবল বাংলার আপামর জনসাধারণের কাছেই তিনি দায়বদ্ধ।
অস্ট্রেলিয়া যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন কাদের সকল প্রবাসীকে বৈধপথে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে বলেন, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা না পাঠাবেন না। হুন্ডি দেশের অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণ ঘটায়।
কলামিস্ট অজয় দাশ গুপ্ত বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের কোনও বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগের শক্তি হল মানুষ। দেশের এত উন্নয়ন সত্ত্বেও পরিকল্পিতভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকারের বিরূদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এর বিরূদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি শেখ হাসিনার স্পষ্ট ভাষণের প্রশংসা করে বলেন, তার প্রতিটি কথার মর্মার্থ আমাদের বুঝতে হবে।
অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাৎ বলেন, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের জাতীয় আর্কাইভে বঙ্গবন্ধু হত্যাসহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য ইতিহাস লিপিবদ্ধ রয়েছে। অর্থনৈতিকসহ নানান সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রহে নানা রকমের গবেষণামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা এবং পচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে অন্যতম শীর্ষ ষড়যন্ত্রকারী ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার।
কৃত অপরাধের জন্য তিনি অবিলম্বে হেনরি কিসিঞ্জারের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেন।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন আশির দশকের ঢাকার তুখোড় আবৃত্তিকার শহীদুল আলম বাদল এবং লেখক আরিফুর রহমান। অনুষ্ঠানে রেমন্ড সোলায়মান পরিচালিত ও গায়িকা শামা রেইন প্রভা গীত, সিডনিতে নির্মিত ১৩টি আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতি কবিতা ‘বাবা’ প্রদর্শিত হয়।