নারী দিবসকে সামনে রেখে শনিবার (০২ মার্চ) সিডনীতে হলিডে ইন ওয়ারিউক ফার্মের একটি মনোরম কনফারেন্স ভেন্যুতে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত হলো অগ্রণী স্কুল এন্ড কলেজের প্রাক্তন ছাত্রীদের পুনর্মিলনী। এদিন, সকাল ১১টা থেকে প্যাস্টেল কালারের মিষ্টি শেডে সজ্জিত হয়ে অগ্রণীর মেয়েরা উপস্থিত হতে থাকে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।
ক্যানবেরা, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন, তাসমানিয়া থেকে আসেন অনেকেই প্রাণের টানে। শুরুতে নাস্তার ব্যবস্থা করে অগ্রণীয়ানরা, সাথে থাকে চা-কফি। হলে প্রবেশপথেই শুকতি সারিতার আঁকা স্কুলের করিডরের ছবি সবাইকে নস্টালজিক করে তোলে। ঠিক দুপুর বারোটায় স্কুলের ঘণ্টার সাথে শুরু হয় অগ্রণীর প্রথম পুনর্মিলনী উৎসব।
রেকর্ডকৃত ভিডিও বার্তায় অগ্রণীর মেয়েদের শুভেচ্ছা বার্তা প্রদান এবং স্মৃতি রোমন্থন করেন অগ্রণীর প্রাক্তন দুইজন শিক্ষক নূরুন নাহার এবং রুবী আকরাম। শিল্পী অমিয়া মতিনের নেতৃত্বে অগ্রণীর মেয়েরা গেয়ে ওঠেন চমৎকার কোরাস- কোন পুরাতন প্রাণের টানে, পুরানো সেই দিনের কথা, We shall overcome, এই মুখরিত জীবনের চলার বাঁকে এবং আশ্বিন ফাগুন মাসে। একক সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী অমিয়া মতিন, শাফিনাজ আমিন এবং ড. মাফরুহা আলম। গীটারে ছিলেন সোহেল খান, তবলা এবং অকটোপ্যাডে জিয়াউল ইসলাম তমাল এবং কীবোর্ডে রাফসান জামান।
জীবনান্দ দাশের কবিতা আবৃত্তি করেন মহসীনা পারভীন। নারীর ক্ষমতায়নকে কেন্দ্র করে বিশেষ থিম -Empower, connect and share অংশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী গীতিনৃত্যনাট্য হতে “আমি চিত্রাংগদা” গানটির সাথে বলিষ্ঠ নাচ পরিবেশন করেন সৈয়দা মাহ-ই-মুনীর। “আমরা অগ্রণীয়ান” নাটকটি অন স্ক্রীন শুভ মুক্তি হয় যা দর্শকরা অত্যন্ত উপভোগ করেন।
নাটকের স্ক্রিপ্ট, পরিচালনা, ক্যামেরা, সিনেমাটোগ্রাফি, এডিটিং করেন ড. মাফরুহা আলম। নাটকে অভিনয় করে ভূয়সী প্রশংসা কুড়ান সৈয়দা সুলতানা, নাইয়ারা কেয়াসি, ড. তনিমা আলী, শুকতি সারিতা এবং সৈয়দা মাহ-ই-মুনীর। এছাড়া শিক্ষা এবং নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদান করা হয় ড. জেসমিন শফিককে। বিভিন্ন স্টেট থেকে আগত অগ্রণীর মেয়েদের প্রদান করা হয় Certificate of appreciation. নারীভিত্তিক এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন অগ্রণীর চার প্রাক্তন শিক্ষার্থীর মা।
পুনর্মিলনী আয়োজনের গল্পের শুরুটা বলেন আয়োজক নাজিয়া হাসান, সাদিয়া আফরিন তানিয়া এবং জেনিফার আহমেদ। আয়োজক ড. মাফরুহা আলম অনুষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত কলাকুশলী সকলকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অত্যন্ত সুস্বাদু লাঞ্চের আগে অগ্রণীর মেয়েরা আসন্ন নারীদিবস উপলক্ষ্যে কেক কাটে এবং ১৯৫৭ সাল থেকে নারীর ক্ষমতায়নে অগ্রণী স্কুলের ভূমিকায় আনন্দ প্রকাশ করে।
লাঞ্চের পর সত্তরের দশক হতে একবংশ শতাব্দী পর্যন্ত জনপ্রিয় ইংরেজী, হিন্দী এবং বাংলা গানের ছন্দে অগ্রণীর মেয়েরা হারিয়ে যায় কৈশোরের আনন্দে। ঠিক তিনটা পঞ্চাশ মিনিটে হাসতে হাসতে গাইতে গাইতে অগ্রণীর মেয়েরা পুনরুজ্জীবিত হয়ে বাড়ির পথে পা বাড়ায়। মিলনমেলা শেষ হয়, কিন্তু তার রেশ থাকবে আরো বহুদিন।