মাটি ও আবহাওয়াজনিত কারণে মধু মাস জ্যৈষ্ঠ আসার আগেই সাতক্ষীরার আম পাকতে শুরু করে। তাই গুণগত মান বজায় রেখে নিরাপদ আম বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে আজ শুক্রবার থেকে সাতক্ষীরায় আনুষ্ঠানিকভাবে আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে।
জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যৌথভাবে আম সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন করেছে। আগামী ১২ মে থেকে আম পাড়ার অনুমোদন থাকলেও পেকে যাওয়া ও ঝড়ের পূর্বাভাস থাকায় এক সপ্তাহ আগে থেকেই গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, গোলাপখাস, বোম্বাই, খিরসরাইসহ স্থানীয় জাতের আম পাড়া হচ্ছে।
শুক্রবার সকাল ৯টায় সাতক্ষীরা পৌরসভা পারকুকরালি গ্রমের আমচাষী মোকছেদ আলীর বাগানে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মঈনুল ইসলাম মঈন প্রধান অতিথি হিসেবে আম সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা কৃষি অফিসার মনির হোসেন, উপ-সহকারী কৃষি অফিসার অমল ব্যানার্জি, ইয়াছির আরাফাত, নাজমা আক্তার।
প্রথম দিনেই সাতক্ষীরা সদর, তালা, কলারোয়া, দেবহাটাসহ সাত উপজেলায় আম চাষিরা সীমিত পরিমাণে আম সংগ্রহ করেছেন। বাজারে প্রতি মণ গোবিন্দভোগ ও গোাপালভোগ, বোম্বাই আম বিক্রি হয়েছে ১৭০০ থেকে ২০০০ টাকায়।
জেলায় এবার ৫ হাজারেরও বেশি বাগানে ৪ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ করেছেন ১৩ হাজার ১০০ চাষী। আর উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন।
সাতক্ষীরা সদরের আম চাষী সায়েদুর রহমান রানা, মোকছেদ আলীসহ অন্যরা জানান, মৌসুম শুরুর পূর্বে বাজারে আম উঠায় সাতক্ষীরার আমের চাহিদাও একটু বেশি। তবে জেলা প্রশাসন কর্তৃক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৫ মে এর পরে হিমসাগরসহ অন্যান্য আম সংগ্রহ করলে বাজারে সাতক্ষীরা আমের চাহিদা কমবে অন্য দিকে বৈরি আবহাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনাও রয়েছে।
তালা উপজেলার আম চাষি পান্না জানান, এ বছর তিনি দুই বিঘা জমিতে আম চাষ করেছেন। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ফলনও পেয়েছেন বাম্পার। তিনি জানান কৃষি সম্প্রসাররণ অফিসের পরামর্শে সঠিকভাবে রোগ-বালাই দমন করে বিশমুক্ত আম উৎপাদন করেছেন। তবে কাল-বৈশাখী ঝড়ের শঙ্কায় রয়েছেন তিনি।
সাতক্ষীরা শহর কাঁচা ও পাকা মাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু জানান, এ বছর সাতক্ষীরায় আমের বাম্পার ফলন হলেও আমের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার শঙ্কায় চাষিরা। তাই লোকসান এড়াতে আম সংগ্রহের দিন এগিয়ে নিয়ে আসার অনুরোধ তাদের।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এক সপ্তাহ এগিয়ে ১২মের পরিবর্তে ৫ মে গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই, গোপালখাস, বৈশাখীসহ স্থানীয় জাতের আম সংগ্রহের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর দিন অপরিবর্তিত রেখে ২৫ মে হিমসাগর, ল্যাংড়া ১ জুন এবং আম্রপালি আম সংগ্রহের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ জুন।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন জানান, সাতক্ষীরাতে এবছর গত বারের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ আম বেশি ফলন হবে। বিষমুক্ত ও গুণগত মানের আম বাজারজাত করার লক্ষ্যে কৃষিবিভাগ ও জেলা প্রশাসনের যৌথ সিদ্ধান্তে আম সংগ্রহের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে প্রয়োজনে আলোচনা করে আম সংগ্রহের দিন এগিয়ে আনা যাবে। এছাড়া ইতোমধ্যে ২০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানির জন্য আদেশ পাওয়া গেছে। তবে রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়বে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, সাতক্ষীরার আমের গুণগত মান ধরে রাখতে প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ তৎপর রয়েছে। কেউ যেন অপরিপক্ব রাসায়নিক মিশ্রিত আম বাজারজাত করতে না পারে সে বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলায় মোট ৭০ মেট্রিকটন অপরিপক্ব আম অভিযান চালিয়ে তা বিনষ্ট করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় আমের উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন।