সাংবাদিকতার স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে আইনের শাসন থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
তিনি বলেছেন, “সাংবাদিকতার স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে আইনের শাসন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র কিছুই থাকবে না। তারা সবাই সে লক্ষ্যে (সাংবাদিকতার স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা) কাজ করবেন।”
শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশান ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
২৬৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা অথবা সহিংসতা-সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে মামলার বিষয়ে বক্তব্যে আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমরা অনেকবার বলেছি, আমি নিজে অনেকবার বলেছি, মিথ্যা মামলাকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মিথ্যা মামলাকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যখন এটা মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হয়। মামলায় তদন্ত হবে, চার্জশিট হবে, বিচার শেষ হবে, তখন মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নিতে পারেন, তার আগে ব্যবস্থা নিতে পারেন না। আমরা সবাই যদি নিশ্চিতভাবে জানিও এটি মিথ্যা মামলা, এখানে অনেককে অভিযুক্ত করা হয়, হয়তো তারা জড়িত না, কিন্তু আমাদের কিছু করার থাকে না।”
তবে মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা নিয়ে সরকার বিব্রত জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, এর সমাধানে আইনি পরিবর্তন করা দরকার বা যেটা করা দরকার তা করা হবে।
একটা দেশে ১৫ বছর ধরে মিথ্যা মামলার চর্চা হয়েছে, সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি মিথ্যা মামলাকারীদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, শেখ হাসিনাকে সরানো হলো কি তার খারাপ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার জন্য? এ সময় মিথ্যা মামলা দায়েরকারীদের ধিক্কার জানান তিনি।
এ বিষয়ে পুলিশকে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া আছে জানিয়ে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, গ্রহণযোগ্য প্রমাণ না পেলে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না।
স্বাধীন সাংবাদিকতা নিয়ে সব সরকারের আমলকে এক না করার আহ্বান জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, কোনও সরকারের আমলে কি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনামের বিরুদ্ধে দেড় শ মামলা হয়েছে? প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে? কোনও সরকারের আমলে কি কোনও পত্রিকায় বেসরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করা হয়েছে? শুধু আওয়ামী লীগ আমলে হয়েছে। এমন অনেক কিছু আওয়ামী লীগের সরকারের আমলে করা হয়েছে, যা অন্য কোনও সরকার, এমনকি এরশাদ সরকারও করেনি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের খুব ইচ্ছা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে প্রাতিষ্ঠানিক করা।
নোয়াবের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচিত সদস্য ও দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এ কে এম আবদুল হাকিমও বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা ও ব্যবসায়ী, পত্রিকার সম্পাদক, রাজনীতিবিদ ও কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন নোয়াবের সহসভাপতি এ এস এম শহীদুল্লাহ খান। অনুষ্ঠানের শুরুতে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ওয়ার্দা আশরাফ।