সরকারি ওষুধ পাচ্ছেন না অ্যানথ্রাক্স আক্রান্তরা, দুইদিনে আরও শনাক্ত ৬

0
সরকারি ওষুধ পাচ্ছেন না অ্যানথ্রাক্স আক্রান্তরা, দুইদিনে আরও শনাক্ত ৬

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্তরা সরকারিভাবে কোনো ওষুধ পাচ্ছেন না। নিজেরা ওষুধ কিনে খাচ্ছেন এবং বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বলছে বহির্বিভাগ খোলা থাকাকালীন আসলে তাদের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। বন্ধের সময় যারা আসছেন, তারা পাচ্ছেন না।

গত সোমবার ও মঙ্গলবার দুইদিনে নতুন করে আরও ৬ জনসহ এখন পর্যন্ত ২২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে রোজিনা বেগম নামে এক নারী অন্যান্য সমস্যাসহ অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। অবশ্য স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ওই নারী অ্যানথ্র্যাক্স আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি। এ নিয়ে আতঙ্ক কাটেনি গরু মালিক ও এলাকাবাসীর।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত ১ অক্টোবর থেকে ৭ অক্টোবর মঙ্গলবার পর্যন্ত যারা চিকিৎসা নিয়েছেন, তারা হলেন-মধ্যে বেলকা গ্রামের সামিউল ইসলাম, সাহাদৎ হোসেন, সবুজ  মিয়া, বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের আজিজুল হক, পশ্চিম বেলকা গ্রামের ভুট্ট মিয়া, আতিকুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, বেলকা গ্রামের মোজাহার আলী, মোজাফ্ফর হোসেন, খতিব মিয়া, ফরিদুল হক, রুজিনা বেগম, কিসামত সদর গ্রামের মোজা মিয়া, মাহবুর রহমান, শাফিকুল ইসলাম, স্বাধীন মিয়া, সকিনা বেগম, তাইজল মিয়া, শিশু ছায়ফান বেগম, আফরিন বেগম, ছালদিয়া ইসলাম, ও রইসুল মিয়া। এদের মধ্যে রুজিনা বেগম রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

সরেজমিন বেলকার কিশামত সদর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, তাদের কারো এক হাতে, কারো দুই হাতেই ফোসকা পড়েছে। এর মধ্যে শুধু মোজাফফর আলীর বাম চোখ মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়েছে।

মোজাফফর আলী বলেন, গত ২৭ সেপ্টেম্বর অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত জবাই করা গরুর মাংস কাটাকাটিতে অংশ নিয়েছিলাম। এর দুইদিন পর বাম হাতে ও বাম চোখে ফোসকা দেখা দেয়। এ অবস্থায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাই। সেখানে ভর্তি হতে চাইলে, চিকিৎসক ওষুধ লিখে দিয়ে বিদায় করে দেন। কোনো ওষুধ দেয় নাই। বাইর থেকে ওষুধ কিনে এনে খাচ্ছি এবং বাড়িতে আছি। প্রতিদিন ১০০ টাকার ওষুধ লাগছে। এরপর গত শুক্রবার রংপুর থেকে গাইবান্ধার একটি ক্লিনিকে আসা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ মনজুরুল করিমের কাছে যাই। বর্তমানে তার চিকিৎসা চলছে। এখন একটু সুস্থ।

একই কথা বলেন, ওই গ্রামের মোজা মিয়া, নুরুন্নবী মিয়া ও নুর নাহার বেগম। তারা বলেন, তাদের পক্ষে এতো দামি ওষুধ কিনে খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ওষুধের দাম অনুযায়ী ২০ দিনের জন্য প্রায় ৩ হাজার টাকার ওষুধ লাগবে। সরকারিভাবে ওষুধ সরবরাহের দাবি তাদের।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিবাকর বসাক বলেন, অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে যারা চিকিৎসা নিতে এসেছিল, তাদের মধ্যে কেউ গুরুতর ছিল না। বেশির ভাগ রোগী রাতে এসেছিল, সে কারণে তাদের ওষুধ দেওয়া সম্ভব হয়নি। গত দুইদিনে (সোমবার ও মঙ্গলবার) নতুন করে আরও ৬ জন চিকিৎসা নিয়ে গেছেন। বুধবার নতুন কোনো রোগী আসেনি।

তিনি বলেন, এ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৬ জনের চিকিৎসা দেওয়া হল। রোগীদের ১০ দিনের অ্যান্টিবায়োটিক লেখে দেওয়া হচ্ছে। অন্যকোনো সমস্যা না থাকলে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে সুস্থ হওয়ার কথা। উপজেলায় একটি মেডিকেল টিম কাজ করছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার দে বলেন, গরু-ছাগলকে অ্যানথ্রাক্স রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। সচেতনতায় উঠান বৈঠক, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। পরীক্ষা করে দুইটি গরুর মধ্যে অ্যানথ্রাক্সের রোগের জীবাণু পাওয়া গেছে। মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here