সত্যিই কি ‘হিমঘরে’ চলে গেছে সৌদি-ইসরায়েল সম্ভাব্য মিত্রতা?

0

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জোর প্রচেষ্টায় মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক নেতা সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক মিত্রতা স্থাপনের বিষয়টি দুর্বার গতি এগিয়ে যাচ্ছিল।

সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রী ও ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানও সাম্প্রতিক বক্তব্যে বলেছিলেন, তার দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের খুব নিকটে রয়েছে। ইসরায়েলের পক্ষ থেকেও এমন বক্তব্য আসছিলো।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ঘনিষ্ঠ দু’টি সূত্রের বরাত দিয়ে শনিবার এক প্রতিবেদনে এমনটিই দাবি করেছে সংবাদসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) এবং গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের মধ্যকার চলমান যুদ্ধের জেরে সঙ্গত কারণেই এই মুহূর্তে নিজেদের আঞ্চলিক কূটনীতি পুনর্বিবেচনা করছে রিয়াদ। এর অংশ হিসেবেই এখন ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও মিত্রতা স্থাপনের ব্যাপারটি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সূত্র আরো জানিয়েছে, বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আমলে নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে মিত্রতার পরিবর্তে এখন ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ট করার চেষ্টা করছে রিয়াদ।

ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া মূলত শুরু হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্যোগে। ২০২১ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক ঘনিষ্ট চেষ্টা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত দু’বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসরের সঙ্গে ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্কও স্থাপিতও হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ও কৌশলগত অংশীদার সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যের ইসরায়েলের অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করতে সৌদির সঙ্গে বিশ্বের একমাত্র এই ইহুদিশাসিত ভূখণ্ডটির মিত্রতা জরুরি ছিল এবং গত বছর থেকে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।

কিন্তু গত শনিবার হামাস ইসরায়েলে যে নজিরবিহীন হামলা চালায়, তারপর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় ইসরায়েলের অমানবিক আগ্রাসনের কারণে পরিস্থিতি বদলে যায়। আল আকসা অঞ্চলের সাম্প্রতিক যুদ্ধ, তার প্রতিক্রিয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ব্যাপক ইসরায়েলবিরোধী অবস্থান এবং সেই সঙ্গে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্ভাব্য মিত্রতা স্থাপন এই মুহূর্তে ‘খুব জরুরি’ নয় বলে মনে করছে সৌদি। কারণ এই মুহূর্তে এ বিষয়ে এগোলে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে দেশটির যে প্রভাব, তা খর্ব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সম্প্রতি ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে ইসরায়েল-হামাস সংঘাত নিয়ে টেলিফোনে কথা হয়েছে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের। এছাড়া গত ৭ অক্টোবর সংঘাতের সময় থেকেই ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও মুক্তিকামী জনগণের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। 
এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে রিয়াদের কয়েকজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, কিন্তু কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়নি, স্থগিত রয়েছে মাত্র।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইসরায়েল’ এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, একই ধরনের সংবাদ গত মাসে আরাবীয় গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছিল, তবে শেষ পর্যন্ত তা ‘মিথ্যা সংবাদ’ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। যদিও বর্তমানে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হচ্ছে, তবে এটি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সূত্র: রয়টার্স, টাইমস অব ইসরায়েল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here