বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের এমপি মাহবুব উল আলম হানিফ নিহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সঞ্জয় কুমার প্রামাণিকের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্য স্বান্তনা দিয়েছেন। তিনি বিক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, সঞ্জয়ের ওপর যারা আঘাত করেছে, যারা তাকে হত্যা করেছে, এদের এবং এর পিছনে যারা মদদদাতা, প্রত্যেককেই আইনের আওতায় এনে বিচার করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে টাকা পয়সা দিয়ে বা ক্ষমতা দিয়ে কেউ পার পেয়ে যাবে। এই অপরাধের কারণে কেউ পার পাবে না। এটার বিচার হবে। এবং যত দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার করা যায় সেই ব্যবস্থা আমরা করব। আমাদের নেতা-কর্মীদের কাছে অনুরোধ থাকবে কেউ আইন নিজের হাতে তোলার দরকার নেই, কোন সহিংসতা, কোন হট্টগোল করার দরকার নেই। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে এর বিচার করব। কেউ আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেব না।’
বুধবার রাত ১২ টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ভেড়ামারায় নিহত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সঞ্জয় কুমার প্রামাণিকের বাড়িতে গিয়ে এসব কথা বলেন।
এ সময় মাহাবুব উল আলম হানিফ সঞ্জয়ের পিতা দুলাল প্রামানিক ও ছোট ভাই সম্পদ প্রামাণিককে বুকে জড়িয়ে ধরে স্বান্তনা দেন। এর আগে রাত ১১টার দিকে ঢাকা থেকে সঞ্জয়ের লাশ ভেড়ামারা শহরে গোডাউনমোড় এলাকার বাড়িতে পৌঁছায়। রাতেই লাশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সেখানে ভিড় জমান। এদিকে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে ভেড়ামারা সাতবাড়িয়া শ্মশান ঘাটে নিহত ভেড়ামারা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সঞ্জয় কুমার প্রামাণিকের সৎকার সম্পন্ন হয়।
এ সময় ভেড়ামারা উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী আক্তারুজ্জামান মিঠু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমুল ইসলাম ছানা, পৌর মেয়র আনোয়ারুল কবির টুটুলসহ বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
গত ২ আগস্ট রাত ১১ টার দিকে ভেড়ামারা পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি সঞ্জয় কুমার প্রামাণিক (৩৫) দলীয় মিটিং শেষে বাড়ি ফেরার পথে তার ওপর হামলা করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গোডাউন মোড় এলাকায় পৌঁছালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) যুবজোটের জেলা ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শোভনের নেতৃত্বে তাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ও হামলা চালানো হয়। হামলায় ভেড়ামারা পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি সঞ্জয় কুমার প্রামাণিকের পায়ে ও মাথায় মারাত্মক জখম প্রাপ্ত হন। হামলার ঘটনায় বেলাল হোসেন (৩৬) ও শ্যামল সরদার নামে আরও দুই কর্মী আহত হন। এসময় স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাদেরকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হামলার ঘটনার পর পরই ভেড়ামারা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে হামলার মূল নায়ক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) যুবজোটের জেলা ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শোভনকে গ্রেফতার করে। হামলার ঘটনার পরের দিন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সঞ্জয়ের স্ত্রী বিথী রাণী দে বাদী হয়ে ভেড়ামারা থানায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) যুবজোটের জেলা ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শোভনসহ ১৪ নামের নামে মামলা দায়ের করেন।
ভেড়ামারা থানার অফিসার ইনচার্জ মো: জহুরুল ইসলাম জানান, উক্ত মামলায় শোভনসহ ৫ জন বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন। বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছেন। এদিকে ভেড়ামারা পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি সঞ্জয় কুমার প্রামানিকের মৃত্যুর ঘটনার পর বুধবার দুপুরে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) যুবজোটের জেলা ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শোভনকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। জাতীয় যুব জোট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকন ও সাধারণ সম্পাদক শরিফুল কবির স্বপন এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানান।