শেষ বলে চার রান প্রয়োজন ছিল চিটাগং কিংসের। অনেকটা সময় নিয়ে ফিল্ডিং সাজিয়েছিলেন খুলনা টাইগার্স অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই কাজে আসেনি। মুশফিক হাসানের অফ স্টাম্পের বাইরের বলটিকে এক্সট্রা কাভার দিয়ে সীমানাছাড়া করেন চিটাগংয়ের স্পিনিং অলরাউন্ডার আলিস আল ইসলাম। ২ উইকেটের শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে ফাইনালে পৌঁছে যায় চট্টলার দলটি। বিপিএলের ইতিহাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠল চিটাগং কিংস। ২০১৩ সালে খেলা নিজেদের সর্বশেষ বিপিএলেও ফাইনাল খেলেছিল তারা।
বুধবার মিরপুরে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৬৩ রান করে খুলনা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৩ বলে ৬৩ রান করেছেন হেটমায়ার।
১৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১২ ওভারেই ১০৫ রান তুলে ফেলেছিল চিটাগং কিংস। হাতে তখনো ৮ উইকেট। শেষ ৮ ওভারে প্রয়োজন ছিল কেবল ৫৯ রান, ওভার প্রতি ৭ রানের কিছু বেশি তুললেই চলত।
৩৫ রানে ২ উইকেট খোয়ানোর পর হুসেইন তালাত এবং ওপেনার খাজা নাফে-র জুটিতে কক্ষপথে ছিল তারা। তৃতীয় উইকেটে এই দুই ব্যাটার মিলে যোগ করেন ৪৮ বলে ৭০ রান। কিন্তু ইনিংসের ১৩তম ওভারের প্রথম বলেই ঘটে ছন্দপতন। নাসুমের বলে ক্যাচ তুলে দেন তালাত। ২৫ বলে ৫ চার এবং ১ ছক্কায় ৪০ রান করা এই ব্যাটারের ক্যাচ লুফে নিতে কোনো ভুল করেননি অ্যালেক্স রস।
আর ১৬তম ওভারের প্রথম বলে মুশফিক হাসান গুঁড়িয়ে দেন নাফে-র স্টাম্প। ৪৬ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় চিটাগংয়ের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৭ রান করা এই পাকিস্তানি ব্যাটারকে আউট করে জোরেশোরেই ম্যাচে ফেরে খুলনা।
কিন্তু চিটাগংয়ের লেজের সারির ব্যাটারদের যে তখনো খেল দেখানো বাকি! দুই স্পিনার আরাফাত সানি এবং আলিস আল ইসলাম মিলে ভাসিয়ে রাখেন চিটাগংয়ের ভেলা। খুলনার বোলারদের হতাশা বাড়িয়ে নিয়মিত বাউন্ডারি আর প্রান্ত পরিবর্তন করে লক্ষ্যের দিকে এগোতে থাকেন তারা।
শেষ ওভারে তবু বড় এক চ্যালেঞ্জই ছিল তাদের সামনে। ৬ বলে দরকার ছিল ১৫ রান। তিন চারের সঙ্গে একটি করে সিঙ্গেল এবং ডাবলে সে হিসাব মেলান চিটাগংয়ের ব্যাটাররা।
খুলনার পক্ষে সর্বোচ্চ তিনটি করে উইকেট নেন দুই পেসার হাসান মাহমুদ এবং মুশফিক হাসান। তবে তাদের এই প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত বিফলে গেছে চিটাগংয়ের বোলারদের ব্যাট হাতে বীরত্বগাথায়।
পেসার বিনুরা ফার্নান্দো এবং স্পিনার আলিস আল ইসলাম মিলে শুরু থেকেই খুলনার ব্যাটারদের চাপে রাখেন। এর মধ্যে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই খুলনার অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজকে (২) বোল্ড করেন বিনুরা। পরের ওভারে আলিসকে ফিরতি ক্যাচ দেন ৬ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে না পারা অ্যালেক্স রস। পাওয়ার প্লে-তে এই দুই উইকেট খুইয়ে ৩০ রানের বেশি তুলতে পারেনি খুলনা।
দলটির ভরসা হয়ে তখনো ক্রিজে ছিলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মোহাম্মদ নাঈম। দর্শনীয় ৪টি চার হাঁকিয়ে খুলনার ইনিংসের হাল ধরার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু অষ্টম ওভারে তার স্টাম্প গুঁড়িয়ে দিয়ে সে সম্ভাবনা শেষ করে দেন খালেদ আহমেদ। তাতে ১৯ রানে সাঙ্গ হয় নাঈমের ইনিংস। পরের ওভারে আফিফ হোসেনকে (৮) সাজঘরের পথ চেনান আরাফাত সানি।
৪২ রানে ৪ উইকেট হারানো খুলনাকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন অঙ্কন এবং হেটমায়ার। পঞ্চম উইকেটে তারা গড়েন ৭৩ রানের জুটি। উইকেট ধরে রেখে দ্রুত রান তোলার ক্ষেত্রে পারদর্শিতা দেখান তারা। ১৮তম ওভারে শরিফুল ইসলামের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৩২ বলে ১ চার ও ৩ ছক্কায় ৪১ রান করেন অঙ্কন।
এদিকে প্লে-অফের আগে খুলনায় যোগ দেওয়া হেটমায়ার ছিলেন আরও আগ্রাসী ভূমিকায়। ১৯তম ওভারের শেষ বলে সাজঘরের পথ ধরার আগে তার ব্যাটে এসেছে ৩৩ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৬৩ রান। চিটাগংয়ের পক্ষে ২৭ রান খরচায় সর্বোচ্চ ২ উইকেট শিকার করেন বিনুরা।