শীত থেকে মুক্তি পেতে নিতে চাচ্ছেন রুম হিটার? জেনে নিন কোনটি উপযোগী

0
শীত থেকে মুক্তি পেতে নিতে চাচ্ছেন রুম হিটার? জেনে নিন কোনটি উপযোগী

শীতের সকালে অ্যালার্ম বেজে উঠলেও কম্বল ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করে না। ঠান্ডা মেঝেতে পা রাখার কথা ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। বাথরুম যেন বরফঘর, মোটা পোশাক পরেও শীত পিছু ছাড়ে না। এমন সময় অনেকেরই মনে হয়—এবার একটি রুম হিটার কেনা দরকার।

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রুম হিটার এখন অনেক পরিবারের প্রয়োজনীয় যন্ত্র হয়ে উঠেছে। তবে বাজারে নানা ধরনের হিটার থাকায় সঠিকটি বেছে নেওয়া সহজ নয়। উষ্ণতা দেওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ খরচ, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও ব্যবহারের সুবিধা—এসব বিষয়ও সমান গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হয়।

কেন ভুল হিটার সমস্যার কারণ হতে পারে

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুল হিটার বেছে নিলে বিদ্যুৎ বিল অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে যেতে পারে। আবার কম দামের অনেক হিটারে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে না, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। যেহেতু শীতকালে হিটার প্রতিদিন এবং দীর্ঘ সময় ব্যবহার করা হয়, তাই কয়েক বছরের ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়াই যুক্তিযুক্ত।

রুম হিটারের ধরন ও ব্যবহার

বাজারে পাওয়া রুম হিটার মূলত কয়েক ধরনের—

অয়েল-ফিলড রেডিয়েটর: ভেতরের তেল গরম করে ধীরে ধীরে তাপ ছড়ায়। শব্দহীন এবং বন্ধ করার পরও কিছু সময় উষ্ণতা ধরে রাখে। অক্সিজেন কমায় না। তবে ঘর গরম হতে সময় লাগে।

কনভেকশন হিটার: বাতাস গরম করে স্বাভাবিকভাবে তাপ ছড়ায়। আকারে ছোট, সরানো সহজ। ছোট ও মাঝারি ঘরের জন্য উপযোগী।

কোয়ার্টজ হিটার: দ্রুত গরম হয় এবং তাৎক্ষণিক তাপ দেয়। বাথরুম বা পড়ার ঘরের জন্য কার্যকর। তবে পুরো ঘর নয়, নির্দিষ্ট দিকেই তাপ দেয়।

হ্যালোজেন হিটার: কোয়ার্টজ হিটারের মতোই কাজ করে। কিছু মডেলে দোলানোর সুবিধা থাকে। বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলক কম।

সিরামিক হিটার: ফ্যান ও সিরামিক রড ব্যবহার করে দ্রুত ও সমানভাবে তাপ দেয়। নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার দিক থেকে ভালো।

ফ্যান হিটার বা ব্লোয়ার: সবচেয়ে সস্তা ও সহজলভ্য। দ্রুত গরম করলেও শব্দ বেশি হয় এবং বাতাস শুষ্ক করে।

নিজের ঘর অনুযায়ী হিটার বাছাই করুন

হিটার কেনার আগে ঘরের আয়তন বিবেচনা করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
১০×১০ ফুটের ঘরের জন্য যে হিটার যথেষ্ট, ১৫×২০ ফুটের ঘরে সেটি কার্যকর নাও হতে পারে। জানালার সংখ্যা, ছাদের উচ্চতা ও ঘরের অবস্থানও তাপ ধরে রাখার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।

সঠিক ওয়াটেজ কতটা জরুরি

সাধারণ নিয়ম হিসেবে ধরা হয়— প্রতি বর্গফুটে প্রায় ১০ ওয়াট। অর্থাৎ, ১৫০ বর্গফুটের ঘরের জন্য প্রায় ১৫০০ ওয়াটের হিটার উপযোগী। তবে ছোট ঘরে অতিরিক্ত ওয়াটেজের হিটার ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ খরচ বাড়বে এবং অস্বস্তি তৈরি হতে পারে।

নিরাপত্তা ফিচার উপেক্ষা করবেন না

রুম হিটার ব্যবহারে নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেনার সময় নিশ্চিত করুন—

উল্টে গেলে নিজে থেকে বন্ধ হয় (টিপ-ওভার প্রোটেকশন)

অতিরিক্ত গরম হলে স্বয়ংক্রিয় বন্ধ (ওভারহিট প্রোটেকশন)

গায়ে হাত লাগলেও ঝুঁকি কম (কুল-টাচ বডি)

শিশুদের নিরাপত্তার জন্য সেফটি গ্রিল

চওড়া ও ভারী বেস

মানসম্মত সার্টিফিকেশন

বিদ্যুৎ খরচ ও এনার্জি সাশ্রয়

রুম হিটার দীর্ঘ সময় চালালে বিদ্যুৎ খরচ উল্লেখযোগ্য হয়। তাই নজর রাখুন—

থার্মোস্ট্যাট ও ইকো মোড

টাইমার ফাংশন

কম ওয়াটেজে স্থির তাপ দেওয়ার সক্ষমতা

সাধারণত অয়েল-ফিলড ও সিরামিক হিটার তুলনামূলকভাবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।

স্বাস্থ্য ও আরামের দিক

কিছু হিটার বাতাস শুষ্ক করে, যা ত্বক ও শ্বাসযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য অয়েল-ফিলড বা সিরামিক হিটার তুলনামূলক নিরাপদ। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রেও মৃদু ও স্থির তাপ দেওয়া হিটার ভালো।

প্রকৃত খরচ হিসাব করুন

হিটার কেনার দামের পাশাপাশি বিদ্যুৎ খরচও হিসাব করা জরুরি।
১৫০০ ওয়াটের হিটার দিনে ৫ ঘণ্টা করে পুরো শীতে ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ বিল কয়েক হাজার টাকা বাড়তে পারে। তাই কিছুটা বেশি দামের হলেও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হিটার দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক।

সঠিক রুম হিটার বেছে নিতে হলে ঘরের আয়তন, ওয়াটেজ, নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও স্বাস্থ্যঝুঁকি—সবকিছু একসঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। সব ঘরের জন্য এক ধরনের হিটার উপযোগী নয়। সচেতন নির্বাচনই পারে শীতের দিনগুলোকে উষ্ণ, স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ করে তুলতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here