শীতে টনসিলের যন্ত্রণা: অবহেলা করলে বাড়ে ঝুঁকি

0
শীতে টনসিলের যন্ত্রণা: অবহেলা করলে বাড়ে ঝুঁকি

শীতে টনসিলের সমস্যা বাড়ে। ওষুধে সাময়িক আরাম মিললেও দীর্ঘদিন অবহেলা করলে জটিলতা দেখা দিতে পারে। কেন হয় টনসিলের ব্যথা, কীভাবে ছড়ায় এবং কী করলে উপশম মিলবে—জেনে নেওয়া জরুরি।

ঋতু পরিবর্তনের সময় এলেই টনসিলের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। শিশু থেকে শুরু করে বড়রা—কারওই রেহাই নেই। কারও গলা ব্যথা, কারও মুখে দুর্গন্ধ, আবার অনেক শিশুর ক্ষেত্রে কথাবার্তাও অস্পষ্ট হয়ে যেতে দেখা যায়। এসব সমস্যার পেছনে অনেক সময় দায়ী টনসিল।

চিকিৎসকদের মতে, টনসিলাইটিস মূলত দুই ধরনের—অ্যাকিউট (তীব্র) ও ক্রনিক (দীর্ঘমেয়াদি)। ব্যথার ধরন যাই হোক, সময়মতো চিকিৎসা না নিলে সমস্যা জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

কেন হয় টনসিলের ব্যথা

টনসিল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নাক ও মুখ দিয়ে শরীরে ঢোকা জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এটি। মুখগহ্বরে থাকা টনসিলের চারটি অংশ—লিঙ্গুয়াল, প্যালাটাইন, টিউবাল ও অ্যাডেনয়েড। এর যেকোনো অংশে সংক্রমণ হলেই তাকে টনসিলাইটিস বলা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে ভাইরাসজনিত সংক্রমণে টনসিলের সমস্যা হয়। তবে স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটেরিয়ার কারণে হওয়া টনসিলাইটিস তুলনামূলক বেশি যন্ত্রণাদায়ক। এ ক্ষেত্রে গলা ব্যথার পাশাপাশি জ্বর, কণ্ঠস্বর বসে যাওয়া কিংবা কথা বলতে কষ্ট হতে পারে।

সংক্রমণ ছড়ায় যেভাবে

ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল—দুই ধরনের টনসিলাইটিসই ছোঁয়াচে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি, লালা বা থুতুর মাধ্যমে জীবাণু ছড়াতে পারে। একই থালা বা পাত্রে খাবার খাওয়া, কাছাকাছি থাকা কিংবা চুম্বনের মাধ্যমেও সংক্রমণ হতে পারে। তাই টনসিলের সমস্যা হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি।

চিকিৎসকদের মতে, ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে টনসিলের সমস্যা বেশি দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে সংক্রমণ জটিল হলে টনসিল ও অ্যাডেনয়েড অপসারণের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

টনসিল থেকে বাড়তে পারে অন্য ঝুঁকিও

দীর্ঘদিন টনসিলাইটিস থাকলে টনসিলের টিস্যু শক্ত হয়ে যেতে পারে (ফাইব্রোসিস)। এ ছাড়া স্লিপ অ্যাপনিয়া কিংবা টনসিলার সেলুলাইটিসের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে, যা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

ব্যথা কমাতে যা করবেন

  • টনসিল হলে ঠান্ডা পানি বা আইসক্রিম এড়িয়ে চলুন
  • মুখের ভেতর পরিষ্কার রাখুন, দিনে অন্তত দু’বার দাঁত ব্রাশ করুন
  • সামান্য গরম পানিতে লবণ মিশিয়েকুলি করুন
  • জ্বর ও ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শে প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যেতে পারে
  • ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণে প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়—নিজে থেকে ওষুধ খাবেন না
  • রাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধে সামান্য হলুদ মিশিয়ে পান করলে উপকার পাওয়া যায়
  • গ্রিন টি ও মধু দিয়ে তৈরি গরম পানীয় জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়তে সহায়তা করে

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—শীতে গলা ব্যথা বা টনসিলের সমস্যা শুরু হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here