শীতের সময় হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদ্রোগের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এই সময়টা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। চিকিৎসকদের মতে, ঠান্ডার কারণে শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় রক্তচাপ বাড়তে পারে। তাই শীতকালে কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি।
শীতে রক্তচাপ বাড়ে কেন
শীতকালে পরিবেশের তাপমাত্রা কমে গেলে শরীর নিজস্ব তাপমাত্রা বজায় রাখতে রক্তনালি সংকুচিত করে। এতে রক্ত চলাচলের পথ সরু হয়ে যায়। ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছাতে হৃদ্যন্ত্রকে বেশি চাপ দিয়ে কাজ করতে হয়। এই অতিরিক্ত চাপের কারণেই রক্তচাপ বেড়ে যায়।
যাদের আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন হঠাৎ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। চিকিৎসকেরা জানান, শীতের সময় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ার এটিই একটি বড় কারণ।
খাদ্যাভ্যাসে সতর্কতা
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে শীতকালে সঠিক খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ। শীতকালীন শাকসবজি ও মৌসুমি ফল নিয়মিত খেতে পারেন। ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। নরম পানীয়, কার্বোনেটেড ড্রিংকস, প্রক্রিয়াজাত মাংস ও প্যাকেটজাত খাবার বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। খাদ্যতালিকায় ওটস, ডালিয়া বা অন্যান্য দানাশস্য রাখলে উপকার পাওয়া যায়।
চা-কফি ও অ্যালকোহল কমানো জরুরি
ঠান্ডায় অনেকেই অতিরিক্ত চা বা কফি পান করেন। কিন্তু অতিরিক্ত ক্যাফিন রক্তচাপ বাড়াতে পারে। দিনে এক-দুই কাপের বেশি চা-কফি না খাওয়াই ভালো। অ্যালকোহলও পরিমিত মাত্রায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর পরিবর্তে আদা বা দারচিনি ফোটানো পানি, তুলসি পাতার চা স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে।
ওষুধ কখন খাবেন
উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সময়মতো খাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকদের মতে, হার্টের জটিলতা না থাকলে সকাল ৬টা থেকে ১০টার মধ্যে রক্তচাপের ওষুধ খেলে ভালো কাজ করে। এ সময় ওষুধ খেলে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিনের মতো ‘স্ট্রেস হরমোন’-এর প্রভাব তুলনামূলক কম থাকে।
তবে যাঁদের হৃদ্রোগ বা দীর্ঘদিনের হাইপারটেনশন রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিকেল বা সন্ধ্যার পর ওষুধ খাওয়ানো হয়। ডাইইউরেটিক জাতীয় ওষুধ সাধারণত সকালে খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা, কারণ রাতে খেলে বারবার প্রস্রাবের চাপ ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
চিকিৎসকেরা স্পষ্ট করে বলেন, রক্তচাপের ওষুধ কখন এবং কীভাবে খাবেন, সে সিদ্ধান্ত নিজে না নিয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলা উচিত।

