শীত এলেই অনেকের পায়ে দেখা দেয় ফাটল—কখনো হালকা রুক্ষতা, কখনো গভীর চির ধরে রক্তপাত পর্যন্ত। হাঁটাচলায় ব্যথা, অস্বস্তি ও সংক্রমণের ঝুঁকির পাশাপাশি পায়ের স্বাভাবিক সৌন্দর্যও নষ্ট হয়। চিকিৎসকদের মতে, পা ফাটা শুধু সৌন্দর্যগত সমস্যা নয়; এটি ত্বকের একটি স্বাস্থ্যগত জটিলতাও। নিয়মিত পরিচর্যা ও সচেতন থাকলে এই সমস্যা সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
কেন পা ফাটে
ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতাই পা ফাটার প্রধান কারণ। শীতের শুষ্ক আবহাওয়া, কম পানি পান, খোলা স্যান্ডেল পরা, দীর্ঘক্ষণ পানিতে কাজ করা, ঘনঘন সাবান ব্যবহার, ভিটামিনের ঘাটতি কিংবা ডায়াবেটিসের মতো রোগ পা ফাটার ঝুঁকি বাড়ায়। অনেক সময় পায়ের ত্বক এতটাই শক্ত ও শুষ্ক হয়ে যায় যে হাঁটার চাপেই ফেটে যায়।
নিয়মিত যত্নেই মিলবে উপকার
পা ফাটা প্রতিরোধে নিয়মিত পরিচর্যার বিকল্প নেই। প্রতিদিন রাতে কুসুম গরম পানিতে ১০–১৫ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখা ভালো। পানিতে অল্প লবণ বা লিকুইড সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে মৃত কোষ নরম হয়। এরপর নরম তোয়ালে দিয়ে মুছে হালকা হাতে পিউমিস স্টোন বা ফুট ফাইল দিয়ে জমে থাকা মরা চামড়া তুলে ফেলতে হবে। অতিরিক্ত ঘষাঘষি করা যাবে না।
ময়েশ্চারাইজিং সবচেয়ে জরুরি
পা পরিষ্কারের পর ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার, গ্লিসারিন, পেট্রোলিয়াম জেলি বা ফুট ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে গোড়ালির ফাটলযুক্ত স্থানে ভালোভাবে লাগানো জরুরি। এরপর তুলার মোজা পরে ঘুমালে সারারাত ক্রিম কাজ করার সুযোগ পায়। কয়েক দিন নিয়মিত করলেই ফাটল অনেকটাই কমে আসে।
ঘরোয়া উপায়েও মিলতে পারে স্বস্তি
নারিকেল তেল বা সরিষার তেল নিয়মিত পায়ে মালিশ করলে ত্বকের শুষ্কতা কমে। মধু প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কার্যকর—গোড়ালিতে মধু লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললে পা নরম হয়। চালের গুঁড়া, মধু ও সামান্য দুধ মিশিয়ে স্ক্রাব বানিয়ে সপ্তাহে এক–দু’বার ব্যবহার করলে মৃত চামড়া দূর হয়। অ্যালোভেরা জেলও পা ফাটার ক্ষেত্রে উপকারী।
ভেতর থেকেও যত্ন দরকার
শুধু বাহ্যিক পরিচর্যা নয়, শরীরের ভেতরের যত্নও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করলে ত্বক শুষ্ক হয় না। খাদ্যতালিকায় ভিটামিন এ, সি, ই ও জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার—যেমন গাজর, কমলা, লেবু, বাদাম, শাকসবজি ও ডিম রাখলে ত্বক সুস্থ থাকে। ডায়াবেটিস থাকলে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি, কারণ এ ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।
যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন
খুব শক্ত বা খোলা স্যান্ডেল দীর্ঘ সময় পরা এড়িয়ে চলা ভালো। গোসলের পর ও ঘুমানোর আগে পায়ে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। শীতকালে অতিরিক্ত গরম পানিতে দীর্ঘক্ষণ পা ভিজিয়ে রাখাও ক্ষতিকর, এতে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে যায়।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
যদি পায়ের ফাটল খুব গভীর হয়, রক্তপাত, তীব্র ব্যথা, পুঁজ বা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে ঘরোয়া চিকিৎসার ওপর নির্ভর না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অবহেলা করলে সাধারণ পা ফাটাই বড় জটিলতায় রূপ নিতে পারে।
সচেতনতা, নিয়মিত যত্ন ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাসই পা ফাটা প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। শীতের দিনে মুখ ও হাতের পাশাপাশি পায়ের প্রতিও যত্নশীল হলে স্বস্তি ও সুস্থতা দুটোই নিশ্চিত করা সম্ভব।

