শীত মৌসুম এলেই উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে অসংখ্য পরিযায়ী পাথি আসে খাবার এবং নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। এর মধ্যে কিছু কিছু পাখি রয়েছে অতি দুর্লভ। তেমনি একটি পরিযায়ী পাখির নাম হচ্ছে লালঝুঁটি ভুতিহাঁস। এর ইংরেজি নাম রেড-ক্রেস্টেড পোচার্ড। সম্প্রতি এই পাখির দেখা মিলেছে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদে। ছবি তুলেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ব বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ।
এই পাখিটি সম্পর্কে জানা গেছে, এই পাখির ছেলে ও মেয়ের চেহারায় পার্থক্য আছে। চেহারা দেখে বোঝা যায় ছেলে এবং মেয়ে। প্রজনন ঋতুতে ছেলে হাঁসের গোল মাথা মরচে-কমলা, ঘাড় কালো, কাঁধে সাদা পট্টি ও বগল সাদা থাকে। বুক ও পেট কালো হয়। ডানায় স্পষ্ট সাদা ডোরা ও পালক সাদা হয়ে থাকে। ফ্যাকাসে ঠোঁটের আগাসহ ঠোঁটটি উজ্জ্বল লাল রংয়ের হয়। চোখ উজ্জ্বল লাল এবং পা ও পায়ের পাতা কালো বেড় সহ কমলা-হলুদ হয়ে থাকে। মেয়েহাঁসের বাদামি ঠোঁটের আগা পটল বর্ণেরও অপ্রাপ্তবয়স্কের ঠোঁট কালচে হয়ে থাকে। এটি মাঝারি ধরনের হাঁস। দৈর্ঘ্য ৫৪ সেন্টি মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ওজন ৯৮০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। ডানা ২৬ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৫ সেমি, পা ৪ দশমিক ২ সেমি, লেজ ৬.৭ সেমি হয়ে থাকে।
লালঝুঁটি ভুতিহাঁস মিঠাপানির হাওর, বিল, বড় জলাশয় ও নদীতে বিচরণ করে। এরা সাধারণত ঝাক বেঁধে উড়তে পছন্দ করে। পানিতে সাঁতার এবং ডুব দিতে পারদর্শী এই পাখি। লতাপাতা, মুকুল, কচিকান্ড, জলজ ঘাস, আগাছার বীজ, জলজ পোকামাকড়,ছোট শামুক-জাতীয় প্রাণী খেয়ে বেচে থাকে। এরা দ্রুত গতিতে উড়তে পারে। ভয় পেলে পানি থেকে সোজা আকাশে উড়ে যায়। ছেলেপাখি কর্কশ গলায় ডাকে।
গ্রীষ্মকালের প্রজনন ঋতুতে জলাশয়ের পাশে লতাপাতার মধ্যে নল ও ঘাসের স্তুপ বানিয়ে বাসা করে ৭ থেকে ১৪টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে।
ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, লালঝুঁটি ভুতিহাঁস বাংলাদেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি। লালঝুঁটি ভুতিহাঁস বিশ্বব্যাপী বিপদমুক্ত পাখি। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।