শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান

0
শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান

শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ ও শোষণ রোধে সমন্বিত সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা। গার্মেন্টস শ্রমিকদের শিশু সন্তানদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে স্থানীয়ভাবে শিশু সুরক্ষার কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন, যা কমিউনিটিভিত্তিক, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে। নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সমাজকল্যাণ বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘কমিউনিটি বেইজড চাইল্ড প্রটেকশন মেকানিজম ফর দ্য চিলড্রেন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এই বিষয়ে আলোচনা হয়। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন টিডিএইচ-এনএল বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার নজরুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন বিটিএস’র পরিচালক মো. জাহিদুল ইসলাম। বক্তৃতা করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) নাঈমা হোসেন, পদ্মা এ্যাপারেলস ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক জাবেদ হোসেন ভূঁইয়া, সহকারী কমিশনার ফারিয়া তাসনিম, জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা রাশেদা বেগম, টিডিএইচ-ইতালিয়ার কান্ট্রি রিপ্রেজনটেটিভ রাজীব দেবনাথ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেহেরুন নেসা, পারভীন আক্তার, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উপদেষ্টা মাবরুক মোহাম্মদ, ইনসিডিনের প্রকল্প পরিচালক অ্যাডভোকেট মো. রফিকুল আলম।

সেমিনারে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন টিডিএইচ-এনএল প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নূরুল কবির। তিনি বলেন, “লাখ লাখ শিশু তাদের পরিচয়ের অধিকার থেকে বঞ্চিত। দেশে ১০২টি শিশু আদালত থাকলেও কিশোর বিচার ব্যবস্থায় শিশুদের জড়িত ২৩ হাজারের বেশি মামলা এখনও বিচারাধীন। গত বছরের তুলনায় ৭৫ শতাংশ মেয়ে শিশুর নির্যাতন বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে ৩০৬ শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে।”

নূরুল কবির আরও বলেন, “এক থেকে ১৪ বছর বয়সী প্রতি ১০ শিশুতে ৯ জন শারীরিক বা মানসিক নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। এই নিপীড়নের সঙ্গে অভিভাবক, শিক্ষক বা রক্ষকরা জড়িত। ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের প্রায় ৭ শতাংশ শিশু শ্রমে জড়িত। সব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুরা পোশাক খাতের শ্রমিক পরিবার সন্তান।”

মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান বলেন, “শিশুরা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ইন্টারনেটের দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান ফাঁদে পড়ছে তারা। শিশুদের সুস্থ বিকাশের স্বার্থে এগুলো বন্ধ করতে হবে। শিশুদের নিরাপদ ও সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য কমিউনিটির অন্তর্ভুক্তি জরুরি। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।”

যুগ্ম সচিব নাঈমা হোসেন বলেন, “সরকার শিশুদের সুরক্ষায় নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। শিশু আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সহিংসতা প্রতিরোধে জরুরি সেবা কার্যক্রম চলছে। তবে সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ করা অসম্ভব।”

সভাপতির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম বলেন, “অনেকে কর্মের খোঁজে পরিবারসহ গ্রাম থেকে নগরে আসেন। কিন্তু শিশুদের যে সুবিধা গ্রামে পাওয়া যায়, তা নগরে নেই। প্রান্তিক সম্প্রদায়ের শিশুদের জন্য আমরা মিরপুর ও গাজীপুরে ১৬টি আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার পরিচালনা করছি। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদেরও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।”

সেমিনারে সুপারিশ করা হয়, পোশাক শ্রমিক শিশুদের নির্যাতন ও শোষণ প্রতিরোধে শিশুবান্ধব সুরক্ষা কাঠামো গঠন করা। গার্মেন্টস এলাকায় পাইলট ভিত্তিতে কমিউনিটি ভিত্তিক শিশু সুরক্ষা কাঠামো তৈরি করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে বিশেষায়িত শিশু সুরক্ষা ইউনিট, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মতো শিশুবান্ধব অধিদপ্তর ও সমন্বিত জাতীয় শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী আইন সংস্কার ও শিশুদের জন্য শিশুবান্ধব বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here