শিল্পবর্জ্যে কাহিল সুতাং নদী

0

হবিগঞ্জ সদর ও লাখাই উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সুতাং নদী। এক সময় খরস্রোতা এই নদী দিয়ে পাল তুলে যেত বড় বড় নৌকা। জেলেদের জালে ধরা পড়ত দেশি নানা জাতের মাছ। সুতাংয়ের পানি দিয়ে চাষ করা হতো নদী পাড়ের হাজার হাজার হেক্টর জমি। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এখন এ নদী অস্তিত্ব সংকটে। এখন নদীতে ধরা না পড়ছে মাছ, না যাচ্ছে নৌকা, না চাষাবাদ করা যাচ্ছে জমি। এর মূল কারণ ক্রমাগত নদী দখলদূষণ। শিল্প বর্জ্যে নদীটির অবস্থা এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে নদীর পানি ব্যবহার করা তো দূরের কথা, দুর্গন্ধে এর পাশ দিয়ে হাঁটাও যায় না। উজান থেকে নেমে আসা শিল্প বর্জের ফলে নদীর পানি কালো আকার ধারণ করেছে। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে নদীর আশপাশের এলাকায়। হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ-ভারতের আন্তসীমান্ত নদী সুতাং। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৮২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩৬ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে এ নদী হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর লাখাই ও সদর উপজেলা দিয়ে কালনী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। একটা সময় নদীটি ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে থাকলেও বর্তমানে নদীটি সাধারণ মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদী থেকে সাধারণ মানুষ না পারছেন কৃষি কাজের জন্য পানি তুলতে, না পারছেন মাছ ধরতে। শুধু তাই নয়, শিল্প বর্জে না বিষাক্ত নদীর পানি গরু ছাগলও পর্যন্ত মুখ দেয় না।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অলিপুর এলাকায় সড়কের উভয় পাশে গড়ে উঠেছে প্রায় শতাধিক কলকারখানা। এসব কারখানায় বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) ব্যবহার করা কথা থাকলেও বেশির ভাগই তা মানছেন না। যে কয়েকটি কারখানায় ইটিপি রয়েছে তা নামেমাত্র। অতিরিক্ত খরচের ভয়ে নিয়মিত চালানো হয় না ইটিপি।

কারখানাগুলোর বর্জ্যই এখন কাল হয়েছে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের। যদিও জেলা প্রশাসন বলছে, নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছার কারণেই সুতাং নদীর এমন বেহাল অবস্থা। তারা সাধারণ কৃষকদের কথা চিন্তা না করে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা নিয়ম মানছে কি না তাও দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। যে কারণে সুতাং নদীর পানি দিয়ে এখন আর চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। বিষাক্ত পানি শরীরে কোনো ভাবে লেগে গেলে চুলকানিসহ বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জুল সোহেল বলেন, সুতাং নদী ধ্বংসের জন্য শিল্পখারকানাগুলো দায়ী। তারা ইটিপি ব্যবহার করছেন না। নদীতে ক্রমাগত শিল্প বর্জ্য পড়ার কারণে নদী পাড়ের মানুষ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে রয়েছে। হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফরিদুর রহমান বলেন, সুতাং নদীকে কীভাবে আবার স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনা যায় তার জন্য কাজ করছে জেলা প্রশাসন। নদীটি রক্ষায় আমরা তৎপর রয়েছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here