শহীদ জাকিরের কবরের পাশে মায়ের জন্য হচ্ছে ঘর

0

চব্বিশ জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ জাকিরের কবরের পাশে পুত্রহারা মাকে ঘর তুলে দিচ্ছে সরকার। জায়গাটি জাকিরের কেনা হল্যে প্রভাশালীদের দখলে ছিলো। ছেলের মৃত্যুর পর স্থানীয়রা প্রশাসনের সহায়তায় উদ্ধার করে সেখানেই দেয়া হয় জাকিরের কবর। সেই কবরকে সামনে রেখেই এখন মায়ের জন্য ঘর করে দেয়ায় সকলেই খুশি হল। তবে শঙ্কা রয়েছে- কাজের এমন ধীরগতিতে জাকিরের মা জীবিত অবস্থায় ঘরে থাকতে পারবে কিনা। এটিও আশপাশের মানুষ দখল করে নেবে। অন্যদিকে পরের বাড়িতে থেকে পুত্রশোকে মরতে হবে মাকে। 
  
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়াসার পানির লাইনের শ্রমিকের কাজ করতেন ২৫ বছর বয়সী জাকির হোসেন। পিতৃহীন জাকির মাকে নিয়ে থাকতেন ঢাকার বাড্ডা এলাকায়। কাজ করে ধীরে ধীরে পৈত্রিক এলাকায় অল্প কিছু জায়গা কেনেন। দরিদ্র হওয়ায় সে জায়গাটিও প্রভাবশালীর দখলে থাকে। জন্মের বছর দুয়েক পরেই বাবা মারা যাওয়ায় তার মা বাবা এবং মায়ের ভূমিকা পালন করেছেন। মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে ছেলেকে বড়া করেছেন। ছেলেও মায়ের কষ্টকে উপলব্ধি করে ছোটবেলা থেকেই শ্রমিকের কাজ করে করেই বড় হয়। 

২১ জুলাই ২০২৪ বিকাল বেলা কাজ শেষে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য দোকান খুঁজতে থাকেন ঢাকা- চট্টগ্রাম সড়কের কাঁচপুর এলাকায়। এসময় পথিমধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে দুদিন পর খবর পান হতভাগা মা মোছা: মিছিলি। 
এরপর অনেক যুদ্ধ করে ছেলের লাশ নিয়ে নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার উত্তর বাকলজোরা ইউনিয়নের আব্বাসনগর গ্রামে ফিরেন। সেখানেও যুদ্ধ। পিতা ফজলু মিয়া জায়গা রেখে না গেলেও জাকিরের উপার্জন করা টাকায় কেনা জায়গায় কবর দেয়া নিয়ে বাধে বিপত্তি। বেদখল হওয়া যাওয়ার কিছু অংশ গ্রামবাসীসহ প্রশাসনের সহযোগিতায় উদ্ধার করে দেয়া হয় কবর। কিন্তু এরপরও ঘরদোরহীন পুত্রহারা মিছিলির জায়গা উদ্ধারের জটিলতা থেকেই যায়। এদিকে ছেলে না থাকায় গ্রামে প্রতিবেশিদের ঘরে জায়গা হয় মিছিলির। 

পরবর্তীতে ৫ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্ররা দফায় দফায় ওই এলাকায় বৈঠক করে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় উদ্ধার করা জায়গায় কবরের পাশে একটি ঘরের প্রস্তাব রাখেন। সরকার সেই ঘর স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে তৈরী করে দিচ্ছে। এতে গ্রামবাসীসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা সন্তোষ প্রকাশ করলেও কাজের ধীরগতি নিয়ে তাদের প্রশ্ন। তারা চান ঘরটি দ্রুত করে দেওয়ার। 

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, জুলাই আন্দোলনে নেত্রকোনা জেলার দশ উপজেলার মোট ১৭ জন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গুলিতে প্রাণ হারান। জেলার মোট তিন  উপজেলায় তিনটি ঘর হচ্ছে। কেউ যেন গৃহহীন না থাকে সেটির দিকে সরকার নজর দিচ্ছে। যাদের জায়গা রয়েছে সেখানে ঘর করে দেয়া হচ্ছে। যাদের নেই তাদেরকেও জায়গা কিনে ঘরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জাকিরের মায়ের জায়গাটি বেদখল ছিলো। এটির উদ্ধারের পর ঘর নির্মাণ চলছে। জাকিরের মায়ের জন্য টাকাও দেয়া আছে যেন তিনি চলতে পারেন। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here