শরীরে বালতি বাঁধা, হাতে ওয়াইপার নিয়ে আকাশ ছোঁয়া ভবনে প্রবাসীদের সংগ্রাম

0

সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্বের সুন্দর দেশগুলোর মধ্যে একটি। দুবাই তার স্বপ্নের নগর। আধুনিকতা ও নান্দনিকতার জন্য এই শহরটি বিশ্বজুড়ে পরিচিত। বিশেষ করে শহরের আকাশচুম্বি অট্টালিকাগুলো যে কারও চোখ ধাঁধিয়ে তোলে। প্রতিদিন এসব ভবন চকচকে রাখতে যারা শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন তেমন কিছু প্রবাসী বাংলাদেশির সংগ্রামের জীবনের গল্প খুব কঠিন।

ভয়কে জয় করা জীবন তাদের। শরীরে বালতি বাঁধা, হাতে ওয়াইপার। এভাবেই জীবন ঝুলে থাকে আকাশ ছোঁয়া ভবনে। দুবাই শহরের উঁচু উঁচু ভবনে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশির এভাবে ঝুলে থাকার চিত্র নিত্যদিনের। এসব ভবনের কাচ (গ্লাস) পরিস্কার করে অনেকে আয় করছেন রেমিট্যান্স। 

দুবাই আসার আগেও যাদের চোখে ধরা দিতো ধু ধু মরুভূমি, জলশূন্য দিগন্ত, দলবদ্ধ উটের সারি অথবা উঁচু-নিচু পাহাড়াকৃতির বালির বিস্তীর্ণ এলাকা। সেখানে এখন তারা দেখছেন হাজারো পরিবর্তন। জীবন জীবিকার টানে ব্যস্ততম এই শহরে অনেককেই তাই বেছে নিতে হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজ। 

তেমনই একজন প্রবাসী মোহাম্মদ শরীফ আহমেদ বলেন, ৫ বছর আগে দুবাইয়ে পাড়ি জমিয়েছি। কিন্তু দুবাই আসার আগে ভাবিনি এ জায়গায় এত উঁচু বিল্ডিং থাকবে। বাংলাদেশে দেখিনি এত উঁচু বিল্ডিং। তিন বছর আগে একটি রোফ এক্সেস কোম্পানির কাজ করি। সেখান থেকে লাইসেন্স করে এ কাজে জড়িত হই। প্রথমে খুব ভয় কাজ করতো। পরে আমার সুপারভাইজরের সাহায্যে উপরে গিয়ে দঁড়িতে ঝুলে কাজ করার সাহস আসে। এখন আর ভয় লাগে না। উপর থেকে দুবাইয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করি। মাঝে মাঝে পরিবারকে নিয়ে চিন্তা করি, এ কাজের মাধ্যমে আমার যদি দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে আমার পরিবার কিভাবে চলবে। আমি পরিবারের রোজগারের একমাত্র সম্বল। দোয়া করবেন যেন সুস্থ ভাবে থাকতে পারি।

বাতাস বাড়লে কখনও কখনও কাজ বন্ধ রাখতে হয়। কিছু সময় শেষে আবারও রশি ধরে উঠতে হয় উপরে। দীর্ঘ ৪ বছর ধরে সিলেটের নুরুল ইসলাম কাজ করেন এমন একটি বহুতল ভবনের জানালা পরিষ্কারে। তার নিত্যদিনের কাজ এটি। শরীরের চারপাশে বেঁধে রাখেন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিভিন্ন সামগ্রী। তার হাতের ছোঁয়ায় আকাশচুম্বি অট্টালিকার সৌন্দর্য পুনরুজ্জীবিত হয়। যেখানে জীবিকার তাগিদ সেখানে ভয় আর উত্তেজনা এখন আর গায়ে মাখেন না নুরুল ইসলাম। 

অন্যজন নাঈম ইসলাম। চোখে মুখে বিষন্নতা আর তিন থেকে চার লাখ টাকার ঋণের বোঝাই এই কাজে বাধ্য করেছে তাকে। ঝুঁকি বেশি হলেও বেতন কম। তিনি বলেন, অন্যত্র ভিসা না পেয়ে বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েছেন এ কাজে। সপ্তাহে ছয় দিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত চলে কর্মযজ্ঞ। বহুতল ভবন, অফিস, ফ্ল্যাট, হোটেল কিংবা হাসপাতালের মতো স্থাপনাগুলো তাদের কর্মস্থল। 

এখানে নিয়োজিত অনেকের ভাবনার বাইরেই ছিল ভবন পরিস্কারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজ। জীবনের ঝুঁকি থাকলেও পরিবারের মুখে হাসি আর দেশে পাঠানো রেমিট্যান্স তাদের দিনশেষের প্রশান্তি।

আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ বেতনের দিক দিয়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে দক্ষ হয়ে কর্মীদের বিদেশে পাড়ি জমানোর পরামর্শ দেন।
 
অভিজ্ঞ প্রবাসীরা বলছেন, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মীরা তুলনামূলক ভালো বেতনে কাজ পান বিদেশে। অনভিজ্ঞতায় বাড়ে কর্মংস্থানের অনিশ্চিয়তা ও কম মজুরির আশংকা। তাই বিদেশে যাত্রার আগেই জেনে বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান তাদের।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here