লাল মরিচে চরাঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্য বদল

0

বগুড়ার যমুনা চরাঞ্চলের কৃষকদের মরিচ চাষে ভাগ্য বদলেছে। চরাঞ্চলে মরিচ এখন কৃষকের প্রধান অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে। বগুড়ার লাল মরিচ দেশজুড়ে বিখ্যাত। যে কারণে প্রতি বছর বাড়ছে মরিচের আবাদ। তবে কৃষকরা বলছেন, চাষ এবং ফলন বেশি হওয়ায় এবার মরিচের দাম গত বছরের তুলনায় কম। তারপরেও মরিচ চাষে তারা লাভবান।

জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার যমুনা নদীর চরাঞ্চলে প্রতিবছরই ব্যাপক মরিচ চাষ হয়ে থাকে। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি লাল মরিচ উৎপন্ন হয় সারিয়াকান্দিতে। উৎপাদিত এই মরিচের বেশি অংশ শুকানোর পর চলে যায় দেশের বিভিন্ন মসলা প্রস্তুকারী কোম্পানিতে। বগুড়ার মরিচের রং এবং ঝাল বেশি হওয়ায় এর চাহিদাও বেশি। যার কারণে কোম্পানিগুলো মরিচ কেনার জন্য প্রতিনিধির মাধ্যমে মৌসুমের শুরু থেকেই তৎপরতা চালাতে থাকে।

বগুড়া কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় এবার রবি মৌসুমে ৫ হাজার ৭১৮ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। যার ৮০ ভাগ চাষ করা হয়েছে যমুনা নদীর চরাঞ্চলে। গত বছর চাষ করা হয়েছিল ৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। ফলন ভাল এবং দাম বেশি পাওয়ার কারণে এবার কৃষক অন্য ফসলের পরিবর্তে মরিচ চাষ বেশি করেছে।

কৃষকরা জানায়, যমুনা এবং বাঙালি নদীর বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পরই জমিতে দেশী মরিচের বীজ বপন বা হাইব্রিড মরিচের চারা রোপন করেন। গত বছরগুলোতে দেশি মরিচে লাগাতার লোকসানের জন্য কৃষকরা হাইব্রিড জাতের মরিচ বেশি চাষ করেছেন। এ মরিচ আগাম ধরে এবং দেশি মরিচের তুলনায় বেশি উৎপন্ন হয়। কাঁচা অবস্থাতেই মরিচ বাজারজাত করে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। যার ফলে কৃষকরা ঝুঁকেছেন হাইব্রিড মরিচে। 

সারিয়াকান্দির আড়ৎদাররা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর মরিচের দাম তুলনামূলক একটু কম। গত বছর যেখানে লাল টোপা মরিচ প্রতি মণ ৩ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হয়েছে। এ বছর তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায়। কাঁচা মরিচ ১১০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা এবং শুকনা মরিচ ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে এরচেয়ে দাম কমলে কৃষকরা ব্যাপকভাবে লোকসানের মুখে পরবেন। 

সারিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নের পারতিত পরল গ্রামের মরিচ চাষী সোনা মিয়া জানান, দেশি জাতের মরিচ চাষ ছেড়ে তিনি এ বছর ৮ বিঘা জমিতে  হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৩ লাখ টাকা। এ পর্য়ন্ত তিনি ৪ লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন। তবে কিছু জমিতে তিনি দেশি জাতের মরিচের চাষ করেছেন। সেখান থেকে লাল মরিচ উত্তোলন করেও তিনি শুকাতে দিয়েছেন। ৪ মণ ১০ কেজি লাল টোপা মরিচ শুকিয়ে একমণ শুকনা মরিচ পাওয়া যায়। এ বছর মরিচ চাষে খরচ বেশি হয়েছে তাই বর্তমান বাজারদরে খুবই সামান্য পরিমাণ লাভ হচ্ছে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, বগুড়ার লাল মরিচ দেশজুড়ে বিখ্যাত। বগুড়ায় এবার রবি মৌসুমে ৫ হাজার ৭১৮ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। যার ৮০ ভাগ চাষ করা হয়েছে যমুনা নদীর চরাঞ্চলে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের জমির ক্ষতি হয়নি। ফলনও হয়েছে ব্যাপক। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। কৃষি অফিস থেকে মরিচ চাষের জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here