রেড অ্যালার্টে থাকা গোল্ড মনির সাথে পালিয়েছে দোলন

0

শেখ শফিউল্লাহ ওরফে গোল্ড মনি। সাতক্ষীরার বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত। তবে রাজনৈতিক এই পরিচয় ছাপিয়ে তার কুখ্যাতি রয়েছে শীর্ষ চোরাকারবারি হিসেবে। পুলিশের তালিকায় সন্ত্রাসী শফিউল্লাহ মনিকে ধরিয়ে দিতে সম্প্রতি পুরস্কার ঘোষণা করেছে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ।

শফিউল্লাহ মনি সাতক্ষীরা সদরের দক্ষিণ কাটিয়া গ্রামের শেখ মোশারফ হোসেনের পুত্র। মনির বিরুদ্ধে অস্ত্র, চোরাচালান, ডাকাতি, দস্যুতা, চাঁদাবাজি, নাশকতাসহ ১০টি মামলা রয়েছে। এসব মামলা হয়েছে সাতক্ষীরার বিভিন্ন থানায়।

তাৎক্ষণিক সেখানে ঘটনাস্থল ঘেরাও করলে ডাকাত দলের সদস্যদের মধ্যে শফিউল্লাহ মনি পুলিশের দিকে গুলি করতে করতে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গোল্ড মনির বিরুদ্ধে কলারোয়া থানায় ওই দিনই ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে পৃথক দু’টি মামলা হয়। সেসময় ঘটনাস্থল থেকে আটক মনির সহযোগী আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তাদের সর্দার হিসেবে গোল্ড মনির নাম প্রকাশ করেন। এরপর শফিউল্লাহ মনিকে গ্রেফতারে দেশব্যাপী রেড অ্যালার্ট জারি করে পুলিশ।

ধরিয়ে বা তথ্য দিলে পুরস্কার

এছাড়া সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ গত ২০ মার্চ শফিউল্লাহ মনিকে ধরিয়ে দিতে বা তথ্য দিতে পারলে পুরস্কারের ঘোষণা দেয়। তাকে ধরিয়ে দিতে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান জেলা পুলিশের ফেসবুকে পেজে পোস্ট দেন। সেখানে শফিউল্লাহ মনির সন্ধান পেলে কলারোয়া থানার ফোন নম্বর ০১৩২০-১৪ ২১ ৪৪, ০১৩২০-১৪ ২২ ০৫, ০১৩২০-১৪ ৩০ ৯৮ কল করার জন্য অনুরোধ করা হয়।

পুলিশের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর অভিযোগ

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, রেড অ্যালার্ট জারির পর গোল্ড মনি আশ্রয় নেন সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সংসদ এবং প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহর হামলা মামলার প্রধান আসামি হাবিবুল ইসলাম হাবিবের ঢাকার বাসায়। বিএনপির সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন। ওই বৈঠকে সাতক্ষীরার এসপি কাজী মনিরুজ্জামানকে সাতক্ষীরা থেকে সরানোর জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা করা হয়। এই ষড়যন্ত্রের কারণ সম্পর্কে অনুসন্ধান করে জানা যায়, ২০১৪-১৫ সালে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন বর্তমান এসপি কাজী মনিরুজ্জামান। সেসময় বিএনপি জামায়াতের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তিনি দৃঢ় ভূমিকা রাখেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সাতক্ষীরায় বিএনপি ইতিমধ্যে নানা চক্রান্ত করছে। পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামানের কারণে সেগুলি বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ায় তাকে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার থেকে সরানোর পরিকল্পনা করা হয়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই চক্রটি ইতোমধ্যে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টার কৌশলের অংশ হিসেবে পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে ও সংবাদমাধ্যমেকে ব্যবহার করে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।

যা বললেন এসপি কাজী মনিরুজ্জামান

এসব বিষয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘শফিউল্লাহ মনি একাধিক মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।’

‘বর্তমানে পলাতক শফিউল্লাহ মনিকে গ্রেফতারের জন্য রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পালিয়ে থেকেও সে সরকারবিরোধী বিভিন্ন কাজে লিপ্ত রয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধেও নানান প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তাকে গ্রেফতার করার পর তাদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’

কে এই শফিউল্লাহ মনি?

শফিউল্লাহ মনি সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা। তার বড় ভাই মাছুম বিল্লাহ শাহীন পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি। বিএনপি সরকারের আমলে মনি তার ভাইয়ের প্রভাব খাটিয়ে রমরমা বদলি বাণিজ্য, মাছ, চিনি, স্বর্ণ চোরাচালান করত। এমনকি তার বিরুদ্ধে শিশু পাচারের অভিযোগও রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শফিউল্লাহ মনি সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ডন খ্যাত আল ফেরদৌস আলফার সঙ্গে আঁতাত করে জেলায় অস্ত্র, স্বর্ণ ও চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। আর ঢাকা থেকে তার সহযোগিতা করেন সোনা চোরাকারবারিদের গডফাদার এনামুল হক খান দোলন ওরফে চোরা দোলন।

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী মনিরুজ্জামান যোগদানের পর মাদকবিরোধী এক অভিযানে ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর আল ফেরদৌস আলফা ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার হয়। এরপর থেকে দায়িত্ব বেড়ে যায় সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য শফিউল্লাহ মনির। তিন মাস সিন্ডিকেটের দায়িত্ব পালনের পর নতুন করে পুলিশের সামনে আসে গোল্ড মনি।

জানা গেছে, শফিউল্লাহ মনির এসব অপকর্মের মাস্টারমাইন্ড সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সংসদ এবং প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহরে হামলার মামলায় প্রধান আসামি হাবিবুল ইসলাম হাবিব।

অপকর্ম করে নানা সম্পদের মালিক

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরা শহরে কাটিয়া, নারকেলতলা, দাসপাড়া, ঋ-শিল্পিসহ শহরের বিভিন্ন এলাকা এবং ঢাকা শহরে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন চোরাকারবারি মনি। চোরাচালান, মাদক ব্যবসাসহ অবৈধভাবে এসব সম্পত্তি অর্জন করেছেন তিনি।

সাতক্ষীরাতে তার মালিকানায় আছে পৌরসভার নারকেলতলার মোড়ে সাজিদ মটরস, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে সংগ্রাম মোটরস, কালিগঞ্জের নলতায় বাজাজ মটরসের শোরুম, বিনেরপোতা এলাকায় নির্মিত ১টি বিলাসবহুল বাড়িসহ নামে বেনামে লেটেস্ট মডেলের প্রাইভেটকার ও মালবাহী ট্রাক।

মনির সাথে পালিয়েছে গডফাদার দোলন

মনির বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট হওয়ার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর চোখে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে সোনা চোরাকারবারিদের গডফাদার এনামুল হক খান দোলন ওরফে চোরা দোলন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোমবার (১০ এপ্রিল) সকালে একটি  ফ্লাইটে কুখ্যাত এই চোরাকারবারি ব্যাংককে পাড়ি জমিয়েছে। বর্তমানে তিনি থাইল্যান্ডে সোনা চোরাচালান চক্রের ছত্রছায়ায় দেশটিতে অবস্থান করছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এক্ষেত্রে নীরব ভূমিকা পালন করলেও ব্যাংককে আত্মগোপনে থাকা চোরা দোলনকে খুঁজছে থাই পুলিশ। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here