ইউক্রেনের গ্যাস ট্রানজিট অপারেটর নাফতোগাজ রাশিয়ার গ্যাজপ্রমের সাথে পাঁচ বছরের চুক্তি নবায়ন করতে অস্বীকৃতি জানানোয় ইউক্রেনের মাধ্যমে ইউরোপে রুশ গ্যাস সরবরাহ বুধবার থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। ২০১৯ সালে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির মেয়াদ ১ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়াকে ‘আমাদের রক্তের বিনিময়ে অতিরিক্ত অর্থ আয়ের সুযোগ’ আর দেওয়া হবে না।
গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ার ফলে ইউরোপের পূর্বাঞ্চলীয় দেশগুলো, বিশেষ করে অস্ট্রিয়া ও স্লোভাকিয়ায় প্রভাব পড়বে। তবে রাশিয়া এখনও তুরস্ক, হাঙ্গেরি ও সার্বিয়ার মতো দেশগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে। এর ফলে মলদোভা যেখানে গ্যাজপ্রম গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, পরিস্থিতি সবচেয়ে সংকটময় হয়ে উঠেছে।
স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো এই সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক ও ভুল’ বলে আখ্যা দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি দেশের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দেবে।
ইউক্রেনে আক্রমণের পর ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইউরোপে রুশ গ্যাসের বাজার ছিল ৩৫ শতাংশ, যা এখন মাত্র ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। ইউরোপ বর্তমানে নরওয়ে, যুক্তরাষ্ট্র এবং কাতার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) ও অন্যান্য পাইপলাইন উৎস থেকে চাহিদা পূরণ করছে।
ইউরোপের জন্য রাশিয়ার গ্যাসের পরিবর্তে টার্কস্ট্রিম পাইপলাইন এবং অন্যান্য রুট ব্যবহার করা একটি সম্ভাব্য বিকল্প। তবে ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে এসব রুট পুরোপুরি চাহিদা মেটাতে পারবে না।
অস্ট্রিয়া ইতিমধ্যে গ্যাজপ্রমের সাথে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি বাতিল করেছে এবং তাদের সরবরাহ পরিকল্পনা পুনর্গঠিত করেছে। অন্যদিকে, চেক প্রজাতন্ত্র জার্মানির পাইপলাইন থেকে গ্যাস গ্রহণ বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং স্লোভাকিয়ার জন্য গ্যাস সরবরাহ ও সংরক্ষণ সুবিধা প্রদান করতে প্রস্তুত।
রাশিয়া গত পাঁচ দশকে ইউরোপে গ্যাস বাজার তৈরি করেছিল, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা তাদের বাজারের বড় অংশ হারিয়েছে। ইউক্রেনের এই সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হলেও এটি রাশিয়ার অর্থনীতিতেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল