২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পরই হুট করে বিশ্ববাজারে বেড়ে যায় খাদ্যশস্যের দাম। সেসময় কৃষ্ণসাগর হয়ে ইউক্রেনের গম ও শস্য রফতানি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বড় ধরনের খাদ্য সঙ্কটের শঙ্কার মুখে পড়ে বিশ্ব। সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে তুরস্ক ও জাতিসংঘ। আঙ্কারা ও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের চেষ্টায় শস্য রফতানি চুক্তিতে সম্মত হয় কিয়েভ ও মস্কো। দফায় দফায় সেই চুক্তির মেয়াদও বাড়ানো হয়। এতোদিন দুই দেশ হামলা-পাল্টা হামলা করলেও শস্য রফতানি চুক্তি ছিল বহাল।
তবে এবার বেঁকে বসেছে রাশিয়া। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দাবি, ইউক্রেন শস্য রফতানি চুক্তির পূর্ণ সুবিধা নিলেও রাশিয়ার কৃষি পণ্য রফতানির বিষয়টি নির্বিঘ্ন করার বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে শর্ত না মানলে এই চুক্তির মেয়াদ আর বাড়াবে না মস্কো। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া গুচ্ছবোমার বিষয়টিও। আছে ক্রিমিয়ান সেতুতে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনাও। এই হামলার জন্য ইউক্রেনকেই দায়ী করছে রাশিয়া।
কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের শস্যবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হওয়ার পর বুধবার ইউরোপের স্টকএক্সচেঞ্জে গমের দাম আগের দিনের তুলনায় (মঙ্গলবার) বেড়েছে ৮ শতাংশ। প্রতি টন গমের দাম হয়েছে ২৫৩.৭৮ ইউরো। সাথে ভুট্টার দাম বেড়েছে ৫.৪ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের গমের দামও বুধবার বেড়েছে ৮.৫ শতাংশ। যা ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ চালানোর পর থেকে সর্বোচ্চ।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউজের এক মুখপাত্র অভিযোগ করেছেন, রাশিয়া বেসামরিক জাহাজে হামলার দায় ইউক্রেনের ওপর চাপানোর পরিকল্পনা করছে।
আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তার দাবি মেনে নেওয়া হলেই তাৎক্ষণিকভাবেই তিনি শস্য রফতানি চুক্তিতে ফিরবেন। পুতিনের শর্তের মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার কৃষি ব্যাংককে আন্তর্জাতিক অর্থ আদান-প্রদান ব্যবস্থায় যুক্ত করা।
এই দোষারোপের খেলায় যদি চুক্তি নবায়নে আরো বিলম্ব হয়, তবে বিশ্ব বাজারে গমসহ খাদ্যপণ্যের দাম তড়তড়িয়ে বাড়বে বলে শঙ্কা সংশ্লিষ্ট খাতের বিশ্লেষকদের। অনেক খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, পরাশক্তিদের এই রেষারেষি বিশ্বের অনেক দেশে দুর্ভিক্ষও ডেকে আনতে পারে।
সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা