ন্যাটোর মহাসচিব এবং ফ্রান্স ও জার্মানির শীর্ষ নেতাদের পর এবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ইউক্রেনকে নিঃশর্তে পশ্চিমা অস্ত্র প্রয়োগের অধিকারের ইঙ্গিত দিলেন। তবে রাশিয়া এমন পদক্ষেপ সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছে।
দীর্ঘ যুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র পেয়েও রাশিয়ার ক্রমাগত হামলার মুখে অসহায় হয়ে পড়ছে ইউক্রেন। এমন পরিস্থিতির জন্য একটি শর্তকে দায়ী করা হচ্ছে, যার আওতায় ইউক্রেন পশ্চিমা অস্ত্র একমাত্র অধিকৃত এলাকায় প্রয়োগ করতে পারে। এতকাল রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে সেই অস্ত্র ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। অথচ রাশিয়া সেই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে সীমান্তের কাছে নিজস্ব ভূখণ্ড থেকে ত্রেপণাস্ত্র, ড্রোন ইত্যাদি ব্যবহার করে চলেছে। ইউক্রেন নিজস্ব ড্রোন ব্যবহার করে রাশিয়ার ভূখণ্ডে বিচ্ছিন্ন হামলার চেষ্টা করেও তেমন সাফল্য পাচ্ছে না।
এবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের কণ্ঠেও সেই ইঙ্গিত শোনা গেল। গতকাল বুধবার মলদোভায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, মার্কিন প্রশাসন ইউক্রেনের বাইরে কোনো লক্ষ্যবস্তুর উপর মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারে সহায়তা বা উৎসাহ দেয়নি। ইউক্রেনকেই নিজস্ব প্রতিরক্ষার স্বার্থে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ব্লিংকেন বলেন, রাশিয়ার হামলার শুরু থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিস্থিতির প্রয়োজন অনুযায়ী মার্কিন প্রশাসন ধাপে ধাপে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা করে এসেছে। রাশিয়ার পদক্ষেপের উপরও সেই সহায়তা নির্ভর করেছে।
উল্লেখ্য, আগামী নভেম্বর মাসের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় হলে ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে এখনই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্য চাপ বাড়ছে।
খারকিভ অঞ্চলে রাশিয়ার হামলার প্রেক্ষাপটে ন্যাটো ইউক্রেনের জন্য নতুন সহায়তার বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে। ন্যাটোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার প্রাগে সে বিষয়ে আলোচনা করছেন। মার্কিন নেতৃত্বে ইউক্রেনের জন্য ১,০০০ কোটি ইউরো অংকের যে সহায়তা প্যাকেজ স্থির করা হয়েছে, তার দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোর হাতে হস্তান্তরের বিষয়ে অগ্রগতি আশা করা হচ্ছে। সেই সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হলে ন্যাটো এই প্রথম সরাসরি ইউক্রেনে ‘লিথাল’ বা আক্রমণাত্মক অস্ত্র হস্তান্তরের দায়িত্ব নেবে।
ইউক্রেনের সহায়তায় ন্যাটোর বাড়তি পদক্ষেপ সম্পর্কে সতর্ক করে দিচ্ছে রাশিয়া। রাশিয়ার ভূখণ্ডে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহারে ছাড়পত্র, এফ-১৬ যুদ্ধবিমান হস্তান্তর এবং ন্যাটোর পক্ষ থেকে সরাসরি অস্ত্র সরবরাহের মতো পদক্ষেপের ফলে বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে বলে মস্কো সাবধান করে দিচ্ছে।
এদিকে, পরিস্থিতি শান্ত করতে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ চীনের উদ্যোগে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি সম্মেলনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, চীন বর্তমান সংকটের মূল কারণ দূর করার পক্ষে যে অবস্থান নিয়েছে, রাশিয়া তাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে। তবে রাশিয়া এমন প্রস্তাবিত আলোচনার ক্ষেত্রেও ইউক্রেনের ভূখণ্ডে অধিকৃত এলাকার উপর কর্তৃত্বের স্বীকৃতি দাবি করছে বলে শোনা যাচ্ছে। ইউক্রেন শুরু থেকেই সেই প্রস্তাব নাকচ করে আসছে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে ও রয়টার্স।