নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীতে পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে টাকা নিয়ে টানাপোড়েনের কারণে মা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম। এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার আলতাফ হোসেন (২৮) কে জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য মিলেছে এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুড়ির কভার আলতাফের মেস থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সুধারাম মডেল থানা প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম। এর আগে, একই দিন বেলা ১১টার দিকে নোয়াখালী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের হরিনারায়ণপুর গুপ্তাংকের বার্লিংটন মোড় সংলগ্ন কচি মিয়ার বাসার দ্বিতীয় তলায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
ভিকটিমের আশ্বাসে গত এক সপ্তাহ আগে আসামি ওমান থেকে ভিসা বাতিল করে সব ছেড়ে দেশে চলে আসেন। দেশে এসে আসামি ভিকটিম নূর নাহার বেগমের বাসায় ৪/৫ বার গিয়ে ব্যবসার টাকা দেওয়ার জন্য বললে ভিকটিম নুর নাহার বেগম ব্যবসার টাকা দিতে টালবাহানা করতে থাকেন।
এসপি বলেন, বুধবার (১৪ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুনরায় টাকা চাওয়ার জন্য আসামি ভিকটিমের মাইজদী শহরের বার্লিংটন মোড়ের হক মঞ্জিলের বাসায় যান। তখন টাকা চাইলে ভিকটিম টাকা দিতে অস্বীকার করে। এনিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে টাকা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আলতাফকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় ভিকটিম। একপর্যায়ে আসামিকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিতে উদ্যত হয়। এতে আসামি আলতাফ ক্ষিপ্ত হয়ে তার সঙ্গে থাকা ছুরি দিয়ে ভিকটিমকে তার রুমের ভেতরে উপর্যুপরি আঘাত করেন।
ওই সময় ভিকটিমের মেয়ে ফাতেহা আজিম প্রিয়ন্তী (১৬) মায়ের চিৎকারের শব্দ শুনে মাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে আসামি আলতাফ তাকেও উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন। ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে প্রিয়ন্তী দৌঁড়ে নিচ তলার ভাড়াটিয়ার বাসার দরজায় ধাক্কা দিলে ভাড়াটিয়া দরজা খুলে দেয়। দরজা খোলার পর পরই প্রিয়ন্তী ডাইনিং রুমের মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ে। প্রিয়ন্তীর পিছু পিছু আসামি আলতাফ হোসেন দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
এদিকে ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে ভিকটিম নুর নাহার বেগম ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে। স্থানীয় লোকজন গুরুতরভাবে জখম প্রিয়ন্তীকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতার আসামি আলতাফ হোসেনকে থানা হেফাজতে নিয়ে পুলিশ বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আসামি পুলিশের কাছে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানায়। এবং তার দেওয়া তথ্য মতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরির কভার তার মেস থেকে জব্দ করা হয়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিও জব্দ করা হয়েছে। এসপি জানান, নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।