আজ থেকে প্রায় এক’শ বছর আগে রংপুর অঞ্চলে নীলগাইয়ের অবাধ বিচরণ ছিল। দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলায় গরু-মহিষের মত এদের ঘুরে বেড়াতে দেখা যেত। কালের বিবর্তনে এই অঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে নীলগাই। প্রবীণ ব্যক্তি, বন বিভাগের কিছু মানুষ ছাড়া এই প্রজন্ম জানেন না নীলগাই এই অঞ্চলের পশু ছিল।
নীলগাই দেখতে অনেকটা ঘোড়ার মতো। দেহের পেছনের দিক কাঁধ থেকে নিচু। সামনের পা পেছনের পা থেকে লম্বা ও ঘাড়ে থাকে ঘন লোম। পুরুষ নীলগাইয়ের গায়ের রং গাঢ় ধূসর, প্রায় কালচে রঙের। অনেক সময় গায়ে নীলচে আভা দেখা যায় বলেই এদের নীলগাই নামকরণ।
স্ত্রী নীলগাই ও শাবকের গায়ের রং লালচে বাদামি, খুরের ওপরের লোম সাদা এবং গালে, চোখের নিচে ও পেছনে দুটি সাদা ছোপ থাকে। ঠোঁট, থুতনি, কানের ভেতরের দিক ও লেজের নিচের দিক সাদা। স্ত্রী নীলগাই আকারে কিছুটা ছোট হয়।
পুরুষ নীলগাইয়ের শুধু শিং হয় এবং দৈর্ঘ্য গড়ে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। শিং দুটি মসৃণ, কৌণিক ও সামনের দিকে ঈষৎ বাঁকানো। শিঙের গোড়া ত্রিকোণাকৃতি হলেও ডগা বৃত্তাকার। পুরুষ নীলগাইয়ের উচ্চতা সাধারণত ১৩০ থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
নীলগাই সমতলে যেমন বিচরণ করতে পারে, তেমনি আবার শস্যখেতে নেমেও ব্যাপক ক্ষতি করতে পটু। সকাল আর বিকেলে খাওয়া শেষে বাকি সময়টা গাছের ছায়ায় বসে কাটায়। ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলেই নীলগাই দেখা যায়। এ ছাড়া পাকিস্তান ও নেপালের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় নীলগাই দেখা যায়। চীনেও নীলগাই রয়েছে বলে জানা যায়। ১৯৫০ সালের আগ পর্যন্ত রংপুরের দিনাজপুর এলাকায় নীলগাই দেখা গেলেও বর্তমানে তা বিলুপ্ত।
নীলগাই বিলুপ্ত হওয়া প্রসঙ্গে রংপুর বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার মোশাররফ হোসেন বলেন, নীলগাই বন-জঙ্গলে থাকতে বেশি পছন্দ করে। এই অঞ্চলে বন-জঙ্গল একেবারে কমে গেছে। ফলে আবাস ও খাদ্য সংকটের কারণে এই অঞ্চল থেকে নীলগাই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। নীলগাই দলবদ্ধভাবে চলতে ভালোবাসে এবং মানুষকে এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে। এদের বিচরণ ক্ষেত্রে মানুষের বসতি গড়ে ওঠায় এরা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছে।
তিনি আরও বলেন, শত বছর আগে এই অঞ্চলে গরু-মহিষের মতো নীলগাইয়ের বিচরণ ছিল। ৬০/৭০ বছর আগে এই অঞ্চল থেকে নীলগাই হারিয়ে যেতে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে এটি বিলুপ্ত প্রাণী। তবে আশার আলো ভারত থেকে আসা নীলগাই উদ্ধার করে গাজীপুর সাফারি পার্কে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে প্রজনন ব্যবস্থার মাধ্যমে এদের বংশ বিস্তারের চেষ্টা চলছে।

