অবশেষে আপত্তি তুলে নিয়ে সুইডেনকে ন্যাটোতে নিতে রাজি হয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। এর ফলে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও শক্তিশালী সামরিক জোটের সদস্য হতে যাচ্ছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ সুইডেন।
এক বছরেরও বেশি সময় আগে ন্যাটোর সদস্যপদ পেতে আবেদন করেছিল দেশটি। কিন্তু তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের আপত্তির কারণে এতদিন সদস্যপদ থমকে ছিল। কেননা, ন্যাটোর নিয়মানুযায়ী, নতুন সদস্য হওয়ার জন্য জোটের প্রত্যেকটি দেশের সমর্থন প্রয়োজন।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, দু’টি কারণে সুইডেনকে ন্যাটোতে নিতে রাজি হয়েছেন এরদোয়ান। প্রথমটি হল— যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের কাছে নতুন ৪০টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিক্রি করবে ও পুরাতন যুদ্ধবিমান সংস্কারের জন্য যন্ত্রাংশ দেবে। এছাড়া আঙ্কারাকে ওয়াশিংটন ৯০০টি এয়ার টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৮০০টি বোমা দেবে।
আর দ্বিতীয়টি হল— তুরস্কের ওপর থেকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে কানাডা।
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করার পর— নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ২০২২ সালের মে মাসে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আবেদন করে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড। আবেদনের এক বছর পর গত ৩০ মে ফিনল্যান্ডের সদস্যপদের অনুমোদন দেয় তুরস্কের পার্লামেন্ট। কিন্তু সুইডেনের বিষয়টি আটকে রাখে দেশটি।
তবে ১১ জুলাই লিথুয়ানিয়ায় ন্যাটোর বার্ষিক সম্মেলন শুরুর আগে সুইডেনের সদস্যপদ নিয়ে তৎপরতা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। এরদোয়ানকে রাজি করাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কয়েকবার তাকে ফোনও করেন।
বাইডেন এরদোয়ানের সঙ্গে কথা বলার পর গণমাধ্যমকে প্রকাশ্যে জানান; যদি তুরস্ক সুইডেনের সদস্যপদের অনুমোদন দিতে সম্মত হয় তাহলে তাদের যুদ্ধবিমান দেবেন তিনি।
অপরদিকে ২০১৯ সালে উত্তর সিরিয়ায় সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে ২০২০ সালে তুরস্কের ওপর অস্ত্র বিক্রির নিষেধাজ্ঞা দেয় কানাডা। তবে দুই দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকের পর নিষেধাজ্ঞা আংশিক তুলে নেয় ওটোয়া এবং আঙ্কারার কাছে ২০২০ সালের জুনে ড্রোন অপটিকস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু ওই বছরের জুলাইয়ে নাগোরনো-কারাবাখ যুদ্ধে ব্যবহৃত ড্রোনে কানাডার তৈরি ওয়েসক্যাম অপটিকস ব্যবহার করায় আবারও নিষেধাজ্ঞা দেয় কানাডা।
পূর্বে কানাডার ড্রোন অপটিকসের ওপর অনেক বেশি নির্ভর ছিল তুরস্ক।
সংবাদমাধ্যম মিডেল ইস্ট আই আরও জানিয়েছে, ন্যাটো সম্মেলনের আগেই তুরস্ক সুইডেনের সদস্যপদের অনুমোদন দিতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু গত ২৯ জুন দেশটির রাজধানী স্টকহামে এক সন্ত্রাসী পুলিশের অনুমতি নিয়ে কোরআন পোড়ালে ক্ষিপ্ত হন এরদোয়ান। কিন্তু চারদিন পর সুইডেন এ ঘটনায় ক্ষমা চাইলে শান্ত হন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে বাইডেন এরদোয়ানকে ফোন করার পর তিনি বাইডেনের কাছে দাবি করেন; ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বিবৃতি দিতে হবে, তারা তুরস্ককে সদস্য করে নেওয়ার কার্যক্রম আবারও শুরু করবে। এরদোয়ানের এমন দাবি শুনে অবাক হন বাইডেন। তখন তিনি এরদোয়ানকে জানান, যখন তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের শাসনামলে সিনেটর ছিলেন, তখন তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদের জন্য লবিং করেছেন এবং এখনও এটিকে সমর্থন জানাবেন। সূত্র: মিডেল ইস্ট আই