যে কারণে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার অস্ত্রসম্ভারে ভাটা পড়েনি

0

রাশিয়ার হাতে যেন বিদেশি সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছাতে না পারে তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকার তাদের ভাষায় ‘সবচেয়ে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা’ ঘোষণা করেছে। 

গত মঙ্গলবার এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তুরস্ক, দুবাই, স্লোভাকিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে।

কিন্তু বিষয়টা হল যুক্তরাজ্য, আমেরিকা এবং ইউরোপিয় ইউনিয়ন একের পর এক বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরও রাশিয়া এখনও যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক যন্ত্রাংশ এবং রসদ সংগ্রহ করে যাচ্ছে।

কীভাবে এটা ঘটছে তার ব্যাখ্যা জটিল, কিন্তু এর পেছনে রয়েছে পশ্চিমা প্রযুক্তি, বিশেষ করে মাইক্রোচিপের মত ক্ষুদ্র কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি হস্তগত করার ব্যাপারে রাশিয়ার দক্ষতায় কখনও ভাটা না পড়া।

ব্যালিস্টিক এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রসহ রাশিয়ার অস্ত্রসম্ভারের বেশিরভাগেই প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয় আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, জাপান, ইসরায়েল এবং চীনে তৈরি ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ।

কিয়েভের কেএসই ইনস্টিটিউট এবং রুশ নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক আন্তর্জাতিক ওয়ার্কিং গ্রুপ ইয়েরমাক-ম্যাকফ্যল জুন মাসে জব্দ করা ৫৮টি রুশ অস্ত্র বিশ্লেষণ করে সেগুলোর মধ্যে ১,০৫৭টি পৃথক বিদেশি যন্ত্রাংশ দেখতে পেয়েছে।

এসব যন্ত্রাংশের প্রায় অর্ধেকই মাইক্রোচিপ এবং প্রসেসর এবং সেগুলোর প্রায় তিন ভাগের দু’ভাগই আমেরিকান কোম্পানির তৈরি।

শুধু তাই নয়, তালিকার শীর্ষ পাঁচটি কোম্পানির সবগুলোই আমেরিকান, যার মধ্যে রয়েছে অ্যানালগ ডিভাইসেস, টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্ট এবং ইন্টেল।

এই গবেষকরা গেল বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পুরো মাত্রায় যুদ্ধ শুরু করার সময় থেকে রুশ অস্ত্রশস্ত্রে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ এবং উপাদানগুলো খতিয়ে দেখেছেন এবং সেখান থেকেও একই তথ্য উদঘাটন করেছেন।

এসব অতি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক যন্ত্রাংশগুলোর বেশিরভাগের ওপরই রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ থাকায় রাশিয়া কোন পশ্চিমা সরবরাহ সংস্থার কাছ থেকে সরাসরি সেগুলো কিনছে না।

পরিবর্তে রাশিয়া এখন তৃতীয় বেশ কিছু দেশের একটা বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এসব যন্ত্রাংশ কিনছে।
যেমন, এ বছর এপ্রিল মাসে নিকেই কোম্পানি জানতে পারে ৭৫% আমেরিকান মাইক্রোচিপ হংকং বা চীনের মাধ্যমে রাশিয়ায় সরবরাহ করা হচ্ছে।

নিকেই-এর অনুসন্ধান দলটি জানতে পারে যে, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর ছোট এবং মাঝারি সাইজের কিছু সরবরাহ সংস্থা গড়ে উঠেছে, যারা কখনও কখনও হংকংএ নাম ও পরিচয়বিহীন অফিস থেকে তাদের কার্যকলাপ চালিয়েছে।

অন্যান্য গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কার্যত অসামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য রাশিয়া এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কিনেছে, যেমন দেশটির মহাকাশ কর্মসূচিতে ব্যবহারের জন্য।

কেএসই এবং ইয়েমাক ম্যাকফ্যল রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী: “রাশিয়ার ক্রয়চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ব্যাপক পরিমাণ ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত বলে দেখা গেছে।”

গবেষণা প্রতিবেদনটি বলছে, এইসব প্রতিষ্ঠানগুলো ছড়ানো রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যেমন চেক প্রজাতন্ত্র, সার্বিয়া, আর্মেনিয়া, কাজাখস্তান, তুরস্ক, ভারত এবং চীনে।

ব্রিটেন সর্বসম্প্রতি নিষেধাজ্ঞার যে নতুন ঘোষণা দিয়েছে তা থেকে এটা পরিষ্কার যে, ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো এধরনের যন্ত্রাংশ বা সামরিক উপাদান সরবরাহে তৃতীয় দেশগুলোর ভূমিকা নিয়ে ক্রমশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে।

তুরস্কের যে দুটি সংস্থার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে সেদুটি হল তুর্কিক ইউনিয়ন এবং আজু ইন্টারন্যাশানাল। “ইউক্রেনে রুশ সামরিক তৎপরতার জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় মাইক্রোইলেকট্রনিক্স রাশিয়ায় রপ্তানিতে এদের ভূমিকার” কথা এখানে তুলে ধরা হয়েছে।

রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে অস্ত্র চুক্তির চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে তালিকাভুক্ত হয়েছে স্লোভাকিয়ার একজন নাগরিক আশত কৃতিশেভ-এর নাম।

মে মাসে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ, ৩৮টি “সর্বাধিক চাহিদাসম্পন্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ”এর তালিকা যৌথভাবে প্রকাশ করে এবং সংস্থাগুলোকে এই মর্মে হুঁশিয়ার করে দেয় যে “এসব যন্ত্রাংশের চূড়ান্ত গন্তব্য যেন রাশিয়া না হয় সেটা নিশ্চিত করতে তারা যেন যথেষ্ট সতর্কতা গ্রহণ করে।”

এই তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সম্বন্বিত ইলেকট্রনিক সার্কিট, সেমিকন্ডাক্টার, লেজার এবং দিকনির্দেশক যন্ত্রপাতি।

পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন এ ব্যাপারে অগ্রগতি হয়েছে এবং এ বছর আরো আগের দিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের জারি করা একটি ডিক্রির প্রতি তারা ইঙ্গিত করেছেন যাতে ইইউ, ব্রিটেন এবং আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত কিছু পণ্যের তুরস্ক দিয়ে চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তারা আরও বলছেন যে, রাশিয়া এখনও যদিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সেমিকন্ডাক্টার আমদানি করতে পারছে কিন্তু সেগুলো সবসময় উন্নত মানের নয়।

একজন কর্মকর্তা জানান, ‘গত বছরের শেষের দিকে রাশিয়ার সেমিকন্ডাক্টার আমদানির মাত্রা বাড়তে শুরু করলেও চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ সময় থেকে সেই পরিমাণ দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here