যুদ্ধ বাড়লে বাড়ে ব্যবসা: এক বছরে ৫.৯% লাফ দিল সামরিক শিল্পখাত

0
যুদ্ধ বাড়লে বাড়ে ব্যবসা: এক বছরে ৫.৯% লাফ দিল সামরিক শিল্পখাত

বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় চলমান যুদ্ধ ও উত্তেজনা অস্ত্রশিল্পে অভূতপূর্ব মুনাফা এনে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআইয়ের) নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শীর্ষ ১০০ সামরিক ও অস্ত্র প্রস্তুতকারী কোম্পানি ২০২৪ সালে মোট ৬৭৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

এসআইপিআরআই জানায়, গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় সামরিক ব্যয় ও অস্ত্র কেনাবেচা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালের তুলনায় অস্ত্র কোম্পানিগুলোর মুনাফা গত বছর ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে।

সবচেয়ে বেশি লাভ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে এশিয়া-ওশেনিয়া অঞ্চলের কিছু কোম্পানিও ভালো করছে, যার বেশিরভাগই চীনা প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রে লকহিড মার্টিন, নরথ্রপ গ্রুম্যান এবং জেনারেল ডায়নামিক্স সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় করেছে। শুধু মার্কিন তালিকার ৩৯ কোম্পানির মধ্যে ৩০টির রাজস্বই বেড়েছে এবং সম্মিলিত আয় ৩৩৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।

তবে এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান, কলাম্বিয়া ও ভার্জিনিয়া–ক্লাস সাবমেরিন এবং সেন্টিনেল আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পে এখনও বিলম্ব ও বাজেট অতিরিক্ত ব্যয়ের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ সময়ই প্রথমবারের মতো স্পেসএক্স প্রবেশ করেছে শীর্ষ সামরিক প্রস্তুতকারকের তালিকায়। তাদের অস্ত্র রাজস্ব ২০২৪ সালে দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

ইউরোপে রাশিয়াকে বাদ দিয়ে শীর্ষ ১০০ তালিকায় ছিল ২৬টি কোম্পানি, যার মধ্যে ২৩টি বিক্রি বৃদ্ধি করেছে। সম্মিলিত অস্ত্র রাজস্ব ১৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫১ বিলিয়ন ডলারে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো চেকোস্লোভাক গ্রুপ। যারা ইউক্রেনের জন্য গোলাবারুদ তৈরি করে রাজস্ব ১৯৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে, যা শীর্ষ ১০০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি।

ইউক্রেনের জেএসসি ইউক্রেনীয় ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি রাজস্ব ৪১ শতাংশ বাড়িয়ে তিন বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ইউরোপীয় অস্ত্র কোম্পানিগুলো রাশিয়ার মোকাবিলায় নতুন উৎপাদন সক্ষমতায় বিনিয়োগ করছে। তবে এসআইপিআরআই সতর্ক করে বলেছে, প্রয়োজনীয় কাঁচামাল- বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ চাহিদা, একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। কারণ চীন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করছে।

রাশিয়ার রোস্টেক এবং ইউনাইটেড শিপবিল্ডিং করপোরেশন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও সম্মিলিত রাজস্ব ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৩১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে।

এশিয়া ও ওশেনিয়ার কোম্পানিগুলো মোট ১৩০ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব অর্জন করেছে, যদিও আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ২ শতাংশ কম। এর বড় কারণ চীনের তালিকাভুক্ত আট কোম্পানির সম্মিলিত আয় ১০ শতাংশ কমে যাওয়া। এর মধ্যে নোরিনকোর রাজস্ব ৩১ শতাংশ হ্রাস সবচেয়ে বড় ধাক্কা। অন্যদিকে, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিক্রি বেড়েছে। তাইওয়ান ও উত্তর কোরিয়া ইস্যুকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায়।

তালিকায় থাকা পাঁচটি জাপানি কোম্পানি ৪০ শতাংশ এবং চারটি দক্ষিণ কোরিয়ান কোম্পানি ৩১ শতাংশ রাজস্ব বাড়িয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হানহা গ্রুপ এক বছরে ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি এসেছে রপ্তানি থেকে।

প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক নয়টি কোম্পানি শীর্ষ ১০০ তালিকায় উঠেছে। তারা সম্মিলিতভাবে ৩১ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব অর্জন করেছে—যা আগের বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি। সুদানের যুদ্ধে অস্ত্র জোগানোর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আঞ্চলিক হিসাব থেকে বাদ পড়েছে আমিরাতভিত্তিক এজ গ্রুপ—কারণ তাদের ২০২৩ সালের রাজস্ব তথ্য পাওয়া যায়নি। সংযুক্ত আরব আমিরাত অভিযোগ অস্বীকার করে।

গাজায় অব্যাহত আগ্রাসনের মধ্যে তালিকাভুক্ত তিনটি ইসরায়েলি কোম্পানি এলবিট সিস্টেমস, ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ, রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস। এদের সম্মিলিত রাজস্ব ১৬ শতাংশ বাড়িয়ে ১৬ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে। শুধু এলবিট সিস্টেমসই আয় করেছে ৬ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। একই সঙ্গে ইসরায়েলি মানববিহীন আকাশযান ও অ্যান্টি–ড্রোন প্রযুক্তির প্রতি আন্তর্জাতিক আগ্রহও বেড়েছে।

তালিকায় থাকা পাঁচটি তুর্কি কোম্পানি রেকর্ড ১০ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব করেছে—যা ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। ড্রোন নির্মাতা বায়কার ২০২৪ সালে ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রাজস্ব দেখিয়েছে, যার ৯৫ শতাংশ এসেছে রপ্তানি থেকে। তালিকায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ভারত, তাইওয়ান, নরওয়ে, কানাডা, স্পেন, পোল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার সামরিক কোম্পানিও রয়েছে।

সোর্স: আল–জাজিরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here