যুক্তরাষ্ট্র বাদ দিয়ে কোথায় ছুটছেন কানাডার পর্যটকেরা

0
যুক্তরাষ্ট্র বাদ দিয়ে কোথায় ছুটছেন কানাডার পর্যটকেরা

একসময় যুক্তরাষ্ট্রে আসা প্রতি চারজন বিদেশি পর্যটকের একজন ছিলেন কানাডিয়ান। তবে সেই চিত্র এখন দ্রুত বদলে যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ব্যাপক শুল্ক এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য করার ইঙ্গিতের পর যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ থেকে সরে যাচ্ছেন বহু কানাডিয়ান। টানা এক বছর ধরে চলা এই ভ্রমণ বর্জনের প্রবণতা থামার কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না।

দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক পর্যটকের সবচেয়ে বড় উৎস ছিল কানাডা। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আগত বিদেশি পর্যটকদের ২৮ শতাংশই ছিলেন কানাডিয়ান। কিন্তু ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেই সংখ্যা দ্রুত কমতে শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ কমেছে ২৩ শতাংশ। এর ফলে আগের বছরের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে।

তবে কানাডিয়ানরা ভ্রমণ বন্ধ করেননি। বরং তারা যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে বিকল্প গন্তব্য বেছে নিচ্ছেন। অনেকেই নিজ দেশেই ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ভ্রমণবিষয়ক লেখক ও কনটেন্ট নির্মাতা এমিলি ব্রিয়োঁ জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেক কানাডিয়ান যুক্তরাষ্ট্র বাদ দিয়ে দেশের ভেতরেই ঘুরছেন। তিনি বলেন, আগে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশেই রোড ট্রিপ করলেও গত মার্চে শুধু কানাডাকেন্দ্রিক ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। এমনকি ২০২৫ সালের এপ্রিলে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে যাওয়ার পারিবারিক ভ্রমণ বাতিল করে সেই বাজেট কানাডায় ঘুরে ব্যয় করেছেন।

টরন্টোভিত্তিক জনসংযোগকর্মী ট্রেসি লামুরি আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি আর কখনো সীমান্ত পার হবেন না। ভ্রমণের জন্য ইউরোপ বেছে নিয়েছেন এবং কাজের প্রয়োজনে জুমই যথেষ্ট। তার মতে, ৫১তম অঙ্গরাজ্যের ইঙ্গিত ও মানবাধিকার পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র এখন পুরোপুরি তার নো গো তালিকায়।

এই প্রবণতা শুধু কানাডিয়ানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক পর্যটকেরা যুক্তরাষ্ট্র এড়িয়ে চললে মোট ক্ষতি ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে।

স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার তথ্য বলছে, ২০২৫ সালে দেশের ভেতরে ভ্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। একই সঙ্গে কানাডিয়ানদের ভ্রমণ বেড়েছে মেক্সিকো, পর্তুগাল, বাহামাস ও বেলিজে। মেক্সিকোর শহরগুলোতে কানাডিয়ান পর্যটক বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। বুয়েনস আইরেস, ওসাকা, কোপেনহেগেন ও কুরাসাওয়ের মতো গন্তব্যে কানাডিয়ানদের খরচ ২০২৪ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।

অন্যদিকে, কানাডিয়ান পর্যটকের ওপর নির্ভরশীল যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অঞ্চল ক্ষতির মুখে পড়েছে। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ভারমন্টে কানাডা থেকে আগত পর্যটক কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। লাস ভেগাসে কমেছে ১৮ শতাংশ। ফোর্ট লডারডেল ও আপস্টেট নিউইয়র্কেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।

ইউরোপ ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট বাড়ানোয় যুক্তরাষ্ট্র এড়িয়ে চলা কানাডিয়ানদের জন্য বিকল্প আরও সহজ হয়েছে। এয়ার কানাডার নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্ক গালার্ডো জানান, বার্লিন, পন্তা দেলগাদা, নঁত ও ব্রাসেলসের মতো ইউরোপীয় শহরে নতুন নন স্টপ রুট চালু করা হচ্ছে। পাশাপাশি ডিসেম্বর মাসে ক্যারিবীয়, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় ১৩টি নতুন রুট চালু করা হচ্ছে, যা মূলত শীতকালে যুক্তরাষ্ট্রমুখী কানাডিয়ানদের লক্ষ্য করেই।

এই প্রবণতা কত দিন চলবে তা স্পষ্ট নয়। তবে এমিলি ব্রিয়োঁ মনে করেন, এটি স্বল্পমেয়াদি নয়। তার মতে, এটি কানাডিয়ানদের ভ্রমণ পছন্দে একটি স্থায়ী পরিবর্তনের সূচনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here