২০১৮ সালের পর জাতিসংঘ কিংবা বিশ্বব্যাংক সফরকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সংবর্ধনা সমাবেশে সভাপতিত্ব করার সুযোগ এবং কখনও কখনও মঞ্চে উঠার অনুমতিও পাননি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরের ২২ তারিখে নিউইয়র্কের নাগরিক সংবর্ধনা সমাবেশের মঞ্চে উপবেশনের সুযোগ পেলেও সভাপতিত্ব করেছেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ফজলুর রহমান। এর ফলে তৃণমূলের সকল নেতাকর্মীর ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে, ড. সিদ্দিকের প্রতি শেখ হাসিনার ন্যূনতম আস্থা নেই।
এ অবস্থায় ড. সিদ্দিকের উচিত ছিল পদত্যাগ করার। কিন্তু তা না করে তিনি পুরনো স্টাইলে সংগঠনের শূন্যপদ পূরণসহ স্টেট সমূহে নতুন কমিটি ঘোষণা দিয়েছেন। এমন একটি পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে এম ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেটি যৌথভাবে পরিচালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসিব মামুন এবং নির্বাহী সদস্য হিন্দাল কাদির বাপ্পা।
বক্তারা সময়ের দাবি অনুযায়ী এম ফজলুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আহ্বান জানান। সে অনুযায়ী এই সভার বরাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী সমীপে একটি আবেদন প্রেরণের সিদ্ধান্ত হয় এবং সেটির অনুমোদন পেলেই বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ফজলুর রহমান দায়িত্বটি গ্রহণ করবেন বলে জানানো হয়।
এই সভায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদেরকে বিজয় করতে সারা আমেরিকায় প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করার পাশাপাশি মার্কিন রাজনীতিকদের কাছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের সঠিক চিত্র উপস্থাপনের লক্ষ্যে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন এম ফজলুর রহমান এবং যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান, মহিউদ্দিন দেওয়ান, আবুল হাসিব মামুন, আব্দুর রহিম বাদশা, কাজী কয়েস, হিন্দাল কাদির বাপ্পাকে। সদস্য হচ্ছেন মোট ১০১ জন।
একইসাথে আরও ৩টি উপ-কমিটির ঘোষণাও দেয়া হয়। এই সভার সংবাদ জেনে ক্ষুব্ধচিত্তে গভীর রাতে ৭ জনের নামে ‘কারণ দর্শানোর নোটিশ’ ইস্যু করেছেন সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাাদক আব্দুস সামাদ আজাদ। এম ফজলুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ঘোষণার দাবি হাই কমান্ডে প্রেরণের আহ্বানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ব্যানারে সভা করায় সংশ্লিষ্টরা সংগঠনের নীতি ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজ করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছেন বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭/ক ধারা অনুযায়ী এই নোটিশ প্রাপ্তির ১৪ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দেয়া হয়েছে। নোটিশে উল্লিখিত ধারাটি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে কোনভাবেই প্রযোজ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
কারণ, এটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোন শাখা সংগঠন নয়। তা হলে উল্লেখ থাকতো ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র শাখা।’ কথিত স্মারকের নোটিশের পরই একই স্মারকে আরেকটি নোটিশে এম ফজলুর রহমানের নাম যুক্ত করে ৮ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। এই নোটিশে অবশ্য আব্দুস সামাদ আজাদকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখানো হয়েছে।
ড. সিদ্দিক এবং সামাদ আজাদের ইস্যুকৃত নোটিশ প্রসঙ্গে সংগঠনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ফজলুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সিংহভাগ সদস্য-কর্মকর্তা যাকে সভাপতি হিসেবে স্বীকারই করি না, তার নোটিশ বা কথায় কী যায় আসবে। আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মাঠে রয়েছি, তার নির্দেশ অনুযায়ী মূলধারায় কাজ করছি। একইসাথে সামনের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে কাজ করছি। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি নির্বাচনী প্রচার কমিটি গঠিত হয়েছে। সুতরাং এখন আর পিছে ফিরে তাকানোর অবকাশ নেই।
ফজলুর রহমান আরও জানান, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে একটি চিঠি যাচ্ছে। সেটির অনুমোদন এলেই আমি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে কাজকর্ম চালাবো।
এ প্রসঙ্গে সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসিব মামুন আরও জানান, নানাবিধ অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ড এবং অনিয়ম ও নীতি-নৈতিকতা পরিপন্থী আচরণের জন্য অনেক আগেই দলীয় নেতা-কর্মীদের আস্থা হারিয়েছেন ড. সিদ্দিকুর রহমান। গত কয়েক বছরে তাকে বহুভাবে বিষয়টি জানানোর পর সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটির প্রক্রিয়া অবলম্বনের অনুরোধেও আমরা সাড়া পাইনি।
এদিকে, ১৬ অক্টোবরের মতবিনিময়ে অংশগ্রহণকারী সকলে সামনের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের নিরঙ্কুশ বিজয়ে সাধ্যমত সোচ্চার থাকার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন। নিকট আত্মীয় ছাড়াও প্রিয় পরিচিত প্রতিবেশীদেরকে নৌকার পক্ষে উজ্জীবিত করতে এখন থেকেই যোগাযোগ করবেন বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।
বক্তারা বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে বাংলাদেশ। সেই গতি অব্যাহত রাখতেই সামনের নির্বাচনেও নৌকার বিজয়ের বিকল্প নেই।