ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। দেশটির অধিকাংশ বিরোধীদল ও নাগরিক সমাজের বড় অংশই তার সেই বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী থেকে শুরু করে তৃণমূল-আপ-শিবসেনা-এসপি-আরজেডি— সব রাজনৈতিক দলের নেতাদেরই দাবি, একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে আত্মহত্যার মতো ভয়াবহ বিষয়কে নিয়ে হাসিঠাট্টা করা খুবই অসংবেদনশীলতার পরিচয়।
মোদীর এই কৌতুক নিয়েই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারতের একাধিক বিরোধী দল। তাদের বক্তব্য, আত্মহত্যা তথা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে দেশবাসীর সামনে তামাশা করলে অত্যন্ত ভুল বার্তা যায়। বিশেষত ভারতের মতো দেশে, যেখানে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী লিখেছেন, “অবসাদ-আত্মহত্যা, বিশেষ করে যুবসমাজের মধ্যে, কোনওভাবেই হাসির ব্যাপার নয়। প্রধানমন্ত্রী নিজে এবং প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে যারা হো হো করে হাসলেন, তারা বরং নিজেদের একটু শিক্ষিত করুন। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অসংবেদনশীল, অসুস্থ মশকরা না করে সচেতনতা বাড়ান।”
রাহুল গান্ধী হিন্দিতে লিখেছেন, “হাজার হাজার পরিবার আত্মহত্যার জেরে তাদের সন্তান হারিয়েছে। তাদের নিয়ে মজা করা ঠিক নয়।”
তৃণমূল কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে টুইট করা হয়েছে, উনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী! মিস্টার নরেন্দ্র মোদী মানসিক স্বাস্থ্য আর আত্মহত্যাকে হেয় করে মজা করছেন! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ২০১৭ সালে ভারতে আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল এক লাখ ২৯ হাজার ৮৮৭। সেটা বেড়ে ২০২১-এ হয়েছে এক লাখ ৬৪ হাজার ৩৩ জন। এটা কঠোর বাস্তব, হাসির কথা নয়।”
সরব হয়েছেন নেটিজেনরাও। তাদের অনেকেরই মতে, কেন এমন কৌতুকের প্রয়োজন হল, তা স্পষ্ট নয়। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যারা কাজ করেন, সেই জগতের লোকজনও যথেষ্ট ক্ষুব্ধ গোটা ঘটনায়।
নীলাঞ্জনা সান্যাল নামে একজন মনোবিদ বলেন, আত্মহত্যা নিয়ে রসিকতা করলে নিজের কাছে নিজেরই লজ্জা হওয়া উচিত। এমন রসিকতা কুরুচিকর, ছিটেফোঁটা সংবেদনশীলতারও অভাব রয়েছে এখানে।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক উপল চক্রবর্তীর কথায়, প্রধানমন্ত্রীর মতো একজন ক্ষমতাবান ব্যক্তি সমাজের একটা বিপন্ন অংশকে নিয়ে রসিকতা করছেন, সেটা খুবই নিষ্ঠুর। কী নিয়ে ঠাট্টা করা যায় আর যায় না, প্রধানমন্ত্রীর মতো লোকের তা ভাবা উচিত। সূত্র: দ্য হিন্দু, আউটলুক, দ্য ইকোনমিক টাইমস, দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া, ইটিভি ভারত, আনন্দবাজার