মোদির দলের সামনে অগ্নিপরীক্ষা

0
মোদির দলের সামনে অগ্নিপরীক্ষা

ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারে দুই দফার বিধানসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। মোট ২৪৩টি আসনের জন্য এই নির্বাচনকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। যা আগামীতে আরও কয়েকটি রাজ্যে ভোটের আগে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবে। এই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন।

বিহারে প্রায় ৭ কোটি ৪০ লক্ষের বেশি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় ভোটগ্রহণ হয়, যেখানে সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রের বাইরে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। দ্বিতীয় ও শেষ দফার ভোটগ্রহণ হবে ১১ নভেম্বর। ভোট গণনা ও ফল ঘোষণা হবে ১৪ নভেম্বর।

বিতর্কিত ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রেক্ষাপটে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটার তালিকা থেকে মুসলিমসহ বহু প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে বিজেপি বিশেষ সুবিধা পেতে পারে। যদিও বিজেপি এবং ভারতের নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুসারে ভোটদানের হার ছিল ৫৩.৭৭ শতাংশ। প্রবীণ এবং বিশেষভাবে সক্ষম ভোটারদের জন্য জেলা প্রশাসন বৈদ্যুতিক তিন চাকার গাড়ির ব্যবস্থা করেছিল। অনেক কেন্দ্রেই উৎসবের মেজাজে বেলুন এবং সেলফি পয়েন্ট দেখা যায়।

ভারতের অন্যতম দরিদ্র ও জনবহুল রাজ্য বিহার থেকে লাখো মানুষ চাকরির খোঁজে অন্য রাজ্যে পাড়ি দেন। এই রাজ্যে বিজেপি এখনও পর্যন্ত এককভাবে সরকার গঠন করতে পারেনি। বর্তমানে বিজেপি জনতা দল (ইউনাইটেড) বা জেডি(ইউ)-এর সঙ্গে জোট করে নির্বাচন লড়ছে। অন্যদিকে, প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস আঞ্চলিক দল রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এবং অন্যান্য ছোট দলের সাথে জোট বেঁধেছে।

এবারের নির্বাচনে প্রশান্ত কিশোরের নেতৃত্বাধীন একটি নতুন রাজনৈতিক দলেরও আগমন ঘটেছে। কিশোর পূর্বে বিজেপি এবং কংগ্রেস উভয়ের সঙ্গেই কাজ করেছেন। এই নির্বাচনটি আরও একটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ, বিহারের রাজনীতিকে প্রায় চার দশক ধরে নিয়ন্ত্রণ করে আসা দুই প্রভাবশালী নেতা, জেডি(ইউ)-এর নীতীশ কুমার এবং আরজেডির লালু প্রসাদ যাদবের সক্রিয় অংশগ্রহণে সম্ভবত এটিই শেষ নির্বাচন হতে চলেছে। খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে আলোচনায় থাকা এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মাঝে মাঝে ক্ষমতার জন্য হাত মিলিয়েছেন।

বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার গত দুই দশকের বেশিরভাগ সময় ধরে সরকার পরিচালনা করেছেন এবং তিনি বিজেপির একজন গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। যিনি ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে মোদীকে সাহায্য করেছিলেন। অন্যদিকে, লালু প্রসাদ যাদব ১৯৯০ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তার দল আরজেডির শাসনকাল দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার সঙ্গে মোড়া হলেও তিনি প্রান্তিক জাতিগোষ্ঠীর নেতা হিসাবে পরিচিত। বর্তমানে তিনি দুর্নীতির মামলায় জামিনে মুক্ত আছেন। বিরোধীদের জোট আরজেডির তেজস্বী যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচনে নারী ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন। মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেক নারী। তাদের ভোটদানের হার ক্রমাগত বাড়ছে। তারা মনে করেন, বিহারের নারীরা মূলত উন্নয়নের ইস্যুতেই ভোট দেন, তাই উভয় জোটই আর্থিক সহায়তার মতো বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁদের মন জয় করার চেষ্টা করছে।

সূত্র: বিবিসি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here