করোনাভাইরাস মহামারীর পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে টালমাটাল অবস্থায় ফেলে দেয়। এতে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। এশিয়ার দেশ জাপানেও দেখা দেয় উচ্চ মূল্যস্ফীতি। তবে দেশটি এবার মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় নিতে যাচ্ছে নতুন উদ্যোগ। কয়েক দশকের সর্বোচ্চ বেতন বৃদ্ধির দেশটির শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো।
জানা গেছে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বেশ কিছুদিন ধরেই বেতন বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাপানের বার্ষিক শ্রম আলোচনায় নতুন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতি হলেও ১৯৯০-এর দশক থেকে জাপানে বেতন বৃদ্ধির গতি ছিল ধীর। ৩৮ সদস্যের দেশ নিয়ে গঠিত অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) অন্যান্য দেশের তুলনায় জাপানিদের গড় বেতন এখনও অনেক কম।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বেতন বৃদ্ধির প্রবণতা টেকসই হবে কি না তা লক্ষণীয়। দীর্ঘদিন ধরেই জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতির হার ২ শতাংশের মধ্যে বজায় রাখার কথা বলে আসছে। যদিও চার দশকের মধ্যে বর্তমানে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ। জাপানি মুদ্রা ইয়েনের চলমান দুর্বল অবস্থা ও পণ্যের ক্রমবর্ধমান দাম বাড়িয়ে দিয়েছে আমদানি খরচও। পরিস্থিতি সামলাতে প্রধানমন্ত্রী কিশিদা বেতন বৃদ্ধির প্রতি বারবার জোর দিচ্ছিলেন।
তবে বেতন বৃদ্ধির প্রভাব জাপানের ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানে পড়বে কি না, তা স্পষ্ট নয়। বিশেষ করে যেখানে কর্মচারীর সংখ্যা সাত এবং খরচ চালাতে যে প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো রীতিমতো লড়াই করে যাচ্ছে।
যদিও এবারের নতুন বেতন বৃদ্ধির হারটি গত বছরের ২ দশমিক ২ শতাংশের তুলনায় বেশি এবং ১৯৯৭ সালের পর সর্বোচ্চ। তবে রেঙ্গো আমব্রেলা গোষ্ঠী ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ নয়, ৫ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে।
এ সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক অব জাপানের সাবেক বোর্ড সদস্য তাকাহিদে কিউচি বলেন, “শুন্তো আলোচনার ওপর নির্ভর করে বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি আর্থিক নীতিতে বড় কোনও পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেবে না।”
জাপান রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ হিসাশি ইয়ামাদা বলেন, “ভোক্তা মূল্যসূচক ৪ দশমিক ১ শতাংশ, যা বেতন বৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে গেছে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশ বজায় রাখতে আগামী বছরগুলোয় ৩ শতাংশ বা তারও বেশি হারে বেতন বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হবে।”
তবে এরই মধ্যে কিছু ইতিবাচক ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। জাপানের অন্যতম প্রধান করপোরেট সংস্থা হিতাচি লিমিটেড আগের বছরের ২ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধির তুলনায় চলতি বছরজুড়ে সামগ্রিক বেতন গড়ে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধির কথা জানায়। এছাড়া জাপানের ট্রেড ইউনিয়নের বৃহত্তম গ্রুপের শ্রমিকরা গত সপ্তাহে বেতন বৃদ্ধির জন্য প্রাথমিক চুক্তিও সম্পন্ন করে। এরই ধারাবাহিকতায় কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেতন বেড়েছে বিশ্বের শীর্ষ গাড়ি নির্মাতা জাপানি প্রতিষ্ঠান টয়োটা ও হোন্ডার কর্মীদের।
কয়েকজন বিশ্লেষক অবশ্য মনে করেন, মূল্যস্ফীতির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে চলে এলেও আগামী বছরগুলোতে উচ্চ বেতনের দাবিতে ইউনিয়নগুলো আরো আগ্রাসী অবস্থান নিতে পারে।
তবে ওইসিডি তথ্যানুসারে, জাপানের বেতন গত ৩০ বছরে বেড়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। অথচ একই সময়ের অন্য সদস্য দেশগুলোতে বেতন বৃদ্ধির পরিমাণ গড়ে ৩৫ শতাংশ। সূত্র: জাপান টাইমস, এবিএস সিবিএন নিউজ, রয়টার্স