১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তি বাহিনীকে সর্বপ্রথম সহায়তাদানকারী ভারতীয় সেনা অফিসার মেজর পরিমল কুমার ঘোষ মারা গেছেন। তিনি পি কে ঘোষ নামেই সমধিক পরিচিত। গত ৬ জুলাই বার্ধ্যক্যজনিত কারণে ভারতের নতুন দিল্লিতে তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে শনিবার এক বিবৃতিতে গভীর শোক জানিয়েছে সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম–মুক্তিযুদ্ধ’৭১।
এদিকে মুক্তযুদ্ধের বন্ধু পি কে ঘোষকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ সন্মাননা না দেওয়ায় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকেই তার স্বীকৃতির জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনা করেছেন। জানতে চাইলে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুণ হাবীব গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে মেজর পি কে ঘোষের অনন্য অবদান রয়েছে। অথচ তিনি এখনও মুক্তিযুদ্ধ সন্মাননা পাননি। এটি আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। সরকার ইতোমধ্যে সাড়ে তিনশ’র বেশি মুক্তিযুদ্ধের বিদেশি বন্ধুদের নানা শ্রেণিতে সন্মাননা দিয়েছে। পি কি ঘোষের বিষয়টি আগে নজেরে আসেনি। আশা করছি তাকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে সরকার ইতিবাচক হবে।’
তখন ইপিআরের স্থানীয় হাবিলদার নুরুদ্দিন এবং তৎকালীন এমএনএ অধ্যাপক ওবায়দুল্লাহ মজুমদার ও আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আমির হোসেন সীমান্ত পেরিয়ে ক্যাপ্টেন পি কে ঘোষের সঙ্গে দেখা করে সাহায্য চান। এ সময় শত শত স্থানীয় মানুষ ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে ইপিআর দলটির সাহায্যে এগিয়ে আসতে থাকলে তারা পাকিস্তান বাহিনীর মেশিনগানের গুলির মুখে পড়ে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে ক্যাপ্টেন ঘোষ ইপিআর হাবিলদার নুরউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি ক্ষুদ্র বাহিনী তৈরি করেন। পরে অগ্রসরমান পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ২৭ ও ২৮ মার্চ নবগঠিত মুক্তি বাহিনী ও পাকিস্তানি সৈন্যদের মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলির পর পাকিস্তানি সৈন্যদলটি অবরুদ্ধ হয়। তাদের রসদ ও খাবার ফুরিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত তারা পরাজিত হয়, কেউ কেউ আত্মসমর্পণ করে, বাকিরা পালিয়ে যায়। নবীন মুক্তি বাহিনী এরপর হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শোভাপুর ব্রিজে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ায়। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে এলাকা মুখরিত হয়। মেজর পি কে ঘোষ যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তে মুক্তি বাহিনীর পরম সুহৃদ হিসেবে অসামান্য ভূমিকা রাখেন।