মুক্তিকে মনোনয়ন দিলে নিশ্চিত জয়লাভ সম্ভব: গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম আওয়ামী লীগ

0

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মো. আব্দুল কুদ্দুসের মৃত্যুতে নাটোর-৪ আসনে উপ-নির্বাচন ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল মতে, নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের ভোট গ্রহণ হবে ১১ অক্টোবর। এরই মধ্যে নির্বাচনে অংশ নিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ফরম জমা দিয়েছেন দুই উপজেলার ১৭ জন প্রার্থী।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ১৭ নেতা এমপি পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও দুই উপজেলা আওয়ামী লীগ সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস তনয়া কোহেলী কুদ্দুস মুক্তিকে একক মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সুপারিশ করেছে।

পৃথক দুই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন- বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মিয়াজী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান এবং গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আনিসুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মতিন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করা কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি’র রাজনীতির হাতেখড়ি পরিবারে হয়েছে। তাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক পদে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে এবং সকল আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে দেখা যায়। নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন বলিষ্ঠ কর্মী, পরীক্ষিত ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ।

চিঠিতে আরও বলা হয়, এক-এগারো পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসাবে রাজধানীতে প্রবল আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তার হাতে গড়া সামাজিক সংগঠন কল্লোল ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে করোনাসহ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগে হত-দরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা, মেডিক্যাল টিমের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদান, মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে বিশেষ বৃত্তি প্রদান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন বয়সের মানুষের জন্য ‘স্বপ্নধার’ নামক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন।

দুই উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোহেলী কুদ্দুস মুক্তিকে এককভাবে এমপি পদে মনোনীত করে সুপারিশ পাঠানোর কারণ নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মীদের সাথে কথা বলেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন। তারা বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত। ছাত্রলীগের হাত ধরে তার ছাত্ররাজনীতির হাতেখড়ি। পরবর্তীতে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছেন। আর এখন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। ঢাকা কিংবা গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম সবসময় সবজায়গাতেই মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সামনে থেকে নেতৃত্বে দিয়েছেন। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তিনি পারফেক্ট এবং ম্যাচিউরড। দুই (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) উপজেলার রাজনৈতিক পরিমণ্ডল এবং সাধারণ মানুষের মাঝে তার সমান গ্রহণযোগ্যতা আছে। নাটোর-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মুক্তি অন্যতম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী।

নাটোর-৪ আসনের এমপি পদে মনোনয়নের জন্য কোহেলী কুদ্দুস মুক্তিকে সুপারিশ করার কারণ জানতে চাইলে গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন বলেন, উনি ছোটবেলা থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করেন। এরকম কিছু অন্য কেউ অর্জন করতে পারেনি।

বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মিয়াজী বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস দীর্ঘদিন ধারে এই জনপদের মানুষের পাশে ছিলেন। তার মৃত্যুতে আসন শূন্য হয়েছে। তার নেতৃত্বে দুই উপজেলার দলীয় নেতা-কর্মীরা পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। তৃণমূলের সাথে পারিবারিক বন্ধন তৈরি হয়েছিল। ওনার মেয়ের সাথেও দুই উপজেলার মানুষের সম্পর্কটাও তেমনই। আমি মনে করি জনগণের ভাবনাটাও তাই।

গুরুদাসপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার রবিউল ইসলাম বলেন, প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। আওয়ামী লীগের নমিনেশনে পাঁচবার এমপি হয়েছে। কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি সেই পরিবারের সদস্য। ছাত্ররাজনীতি করেছেন, যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। নিরপেক্ষ দৃষ্টি থেকে বলতে চাই, যারাই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের জন্য নমিনেশন সাবমিট করেছে- আমি মনে করি তার মধ্যে কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি অন্যতম যোগ্যতাসম্পন্ন।

গুরুদাসপুরের ড. জোহা সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক নাসরিন সুলতানা রুমা বলেন, আমি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করি। নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে রাজনৈতিক দলে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর শর্ত শূন্য আছে। নির্বাচিত হতে পারবেন না এই অজুহাতে আমাদের দেশে জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে নারী প্রার্থীদের উপেক্ষা করা হয়। অথচ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে নারীর ক্ষমতায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, আমাদের এই জনপদে সমস্যা হচ্ছে মেয়েদের কেউ দাঁড়াতে দেয় না। কিন্তু উনি (মুক্তি) সবকিছু ভেদ করে একটা অবস্থান তৈরি করেছে। একজন নারী রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তিনি যথেষ্ট পারফেক্ট এবং যথেষ্ট ম্যাচিউরড। ওনার সাথে যারা আছে সবাই শিক্ষিত। কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টে ওনার প্রতিষ্ঠান কল্লোল ফাউন্ডেশন ‘জয় বাংলা অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে।

এমপি পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশীদের মধ্যে কোহেলী কুদ্দুস মুক্তির বিপুল জনপ্রিয়তা দুই উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের কাছে আছে জানিয়ে গুরুদাসপুরের মশিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্ষীয়ান নেতা কুদ্দুস সাহেবের রক্ত যার শরীরে- সে তো জন্মের পর কথা বলা শিখেছে ‘আওয়ামী লীগ’, ‘জয় বাংলা’ বলে। মুক্তি আপা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারপর যুব মহিলা লীগের নেতৃত্বেও ছিলেন। বিশেষ করে দুই উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের কাছে সংগঠন এবং সংগঠনের বাইরে তার বিপুল জনপ্রিয়তা আছে। অনগ্রসর মানুষকে শিক্ষিত করার জন্য কল্লোল ফাউন্ডেশনের মধ্য দিয়ে তিনি বিভিন্ন রকমের স্কুল করেছে। জানি না জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৭ জনের মধ্যে কাকে মনোনয়ন দিবেন। তবে এই ১৭ জনের বেশিরভাগই স্থানীয় নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতা করেছে।

বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান পিয়াস বলেন, যোগ্যতার দিক থেকে মুক্তি আপাই ঠিক আছে। ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী ছিলেন। যুব মহিলা লীগ করেছেন, এখন জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। এখানে আরেকটা বিষয় আছে, মুক্তি আপা কিন্তু আমাদের দুই উপজেলাতেই পরিচিত। মুক্তি আপাকে দুই উপজেলার সবাই সমানভাবে চিনে এবং তিনি সমন গ্রহণযোগ্যও। বড়াইগ্রামে যারা আওয়ামী লীগ নেতা আছেন তারা গুরুদাপুরের কাউকে চায় না আবার গুরুদাপুরের যারা আছে তারা বড়াইগ্রামের কাউকে চায় না। কিন্তু মুক্তি আপাকে যদি এই ক্ষেত্রে মনোনয়ন দেয়া হয়- দুই উপজেলার আওয়ামী লীগই তাকে সমানভাবে সমর্থন দিবে। দুই উপজেলার আওয়ামী লীগসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এখন তার সাথে আছে। মুক্তি আপাকে মনোনয়ন দেয়া হলে তিনি বিপুল ভোটে নৌকাকে বিজয়ী করে শেখ হাসিনাকে বিজয় উপহার দিতে পারবেন।

সূর্যোদয় সামাজিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, মুক্তি আপা দেশের সমস্ত আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। কল্লোল ফাউন্ডেশনের করে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রচুর সহায়তা করেছেন। করোনার সময়ে সবকিছু যখন স্থবির, মানুষ ঘর থেকে বের হয় না- তখনও তিনি খাদ্য সহায়তা করেছেন। আদিবাসীদের শিক্ষা নিশ্চিতের জন্য স্কুল গড়েছেন। এলাকায় তিনি কখনো এমপি-মন্ত্রীর কন্যা হিসেবে চলেননি। সাধারণ মানুষ হিসেবে সবসময় মানুষের পাশে থেকেছেন।

জানতে চাইলে বড়াইগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মাহাবুল ইসলাম বলেন, মুক্তি আপা সেই বিরোধী দলের সময় থেকে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করছে। উনি শুধু আব্দুল কুদ্দুস সাহেবের সন্তান হিসেবে না বরং ব্যক্তিগতভাবে উনি এমপি হওয়ার যোগ্য। ব্যক্তি মুক্তি আপা অন্যান্য প্রার্থীদের চেয়ে অনেক বেশি যোগ্য। কারণ দুই উপজেলাতেই তার যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা আছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here