মা দিবসে এ কেমন বঞ্চনা জুটল তার কপালে!

0

রবিবার ছিল বিশ্ব মা দিবস। এদিন বিশ্বজুড়ে মায়ের প্রতি ভালোবাসার নানা গল্প এসেছে গণমাধ্যমে। এসব গল্প পড়ে মায়ের প্রতি অগাদ ভালোবাসা, শ্রদ্ধা যখন বাড়ছিল, তখন হঠাৎ সামনে এল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। মায়ের প্রতি ভালোবাসার এই দিনে জমজ কন্যা সন্তানের মা হলেন এক মানসিক ভারসাম্যহীন অভাগা তরুণী, যার সন্তানের বাবা কে, জানেন না তিনি। গোটা বিশ্ব যখন মায়ের প্রতি ভালোবাসা জানাচ্ছে, তখন তার কপালে জুটল এই বঞ্চনা!

জানা গেছে, রবিবার (১৪ মে) সকাল ৮টা ২০ মিনিটে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রথম কন্যা সন্তানের জন্ম দেন সুফিয়া। দ্বিতীয় কন্যার জন্ম দেন ৮টা ২৫ মিনিটে। 

এ বিষয়ে ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. হুমায়ুন কবির বলেন, সুফিয়া একজন মানসিক ভারসাম্যহীন (পাগলী)। তিনি এক সাথে দু’টি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

কিন্তু তাদের বাবা কে? এ বিষয়ে সুফিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনও কথা বলেননি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুফিয়া মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি কারো কাছে তার পরিচয় দেন না । যেখানে সন্ধ্যা হয় সেখানেই তার রাত কাটে। কেউ কেউ বলেছেন, সুফিয়া মানসিক ভারসাম্যহীন হিসেবে পরিচিত হলেও প্রায় সময়ই স্বাভাবিক কথাবার্তা বলে থাকেন।

আরও জানা গেছে, বেশ কিছুদিন যাবৎ ফুলপুর পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড ও আমুয়াকান্দা বাজার এলাকার ফুটপাতে সুফিয়াকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, সুফিয়ার বাড়ি পার্শ্ববর্তী হালুয়াঘাট উপজেলার কৈচাপুর গ্রামে। কিন্তু সুফিয়া পাগলি বলে তার খোঁজ খবর কেউ রাখে না।

এদিকে, সুফিয়া যে গর্ভবতী তা মাসখানেক আগে আমুয়াকান্দার এক মানবাধিকার কর্মীর নজরে আসলে তিনি তাকে ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.হুমায়ুন কবির তাকে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে আসছিলেন। 

ডা. হুমায়ুন জানান, সাধারণত ৩৬ সপ্তাহে শিশু জন্ম নেয়। কিন্তু সুফিয়া ৩৩ সপ্তাহেই তার ২ কন্যা শিশুর জন্ম দিয়েছেন। এছাড়া স্বাভাবিক শিশুদের ওজন কমপক্ষে ২০০০ গ্রাম হয়ে থাকে।  কিন্তু সুফিয়ার প্রথম শিশুর ওজন ১৫০০ গ্রাম ও দ্বিতীয় শিশুর ওজন ১৮০০ গ্রাম। ফলে তারা ঝুঁকিমুক্ত নয়। এজন্য দুপুর ১২টার দিকে নিজ খরচে তিনি তাদেরকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছেন।

বিশ্ব মা দিবসে পিতৃপরিচয়হীন যমজ কন্যা শিশুর জন্ম দিয়ে ‘পাগলী মা সুফিয়া’ টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছেন। 

এ  বিষয়ে ফুলপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রওশন আরা বেগম বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। সমাজে এখনও মহিলারা অবহেলিত। সারা বছর তাদের খোঁজখবর কেউ নেয় না। নিলে এমন ঘটনা হয়তো ঘটতো না। এসময় তিনি ভুক্তভোগী মা ও নবজাতকদের জন্য সরকারি তদারকি দাবি করেন। 

এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আরমানা হক বলেন, আমরা গর্ভবতী মা’দের সহযোগিতা করে থাকি। এখন উনার তো বাচ্চা হয়ে গেছে। উনার ব্যাপারে আমাদের দফতর থেকে কিছু করার নেই। 

এ বিষয়ে ফুলপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বিশ্ব মা দিবসে আজ  (রবিবার) যেসব মা থানায় আসছেন তাদের প্রত্যেককে ফুলের তোড়া দিয়ে সম্মান জানানো হয়েছে।

পাগলী সুফিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুফিয়ার শিশু কন্যাদের পিতৃপরিচয় খুঁজে বের করতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে পুলিশ।

ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম সাজ্জাদুল হাসানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্ব মা দিবসে ফুলপুরে পিতৃপরিচয়হীন যমজ কন্যার জন্ম একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা। প্রাথমিকভাবে আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় যমজ শিশু দুটি ও তাদের মায়ের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে তাদেরকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। আর শিশুদের পিতৃপরিচয় খুঁজে বের করতে পুলিশের সহায়তায় কাজ চলছে। দায়ী ব্যক্তিকে খুঁজে পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here