মামুলি অপরাধে জড়িত কাগজপত্রহীন অভিবাসীদেরকেও গ্রেফতার করে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার একটি বিল মার্কিন কংগ্রেসে পাশ হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই কাগজপত্রহীন অর্থাৎ অবৈধ অভিবাসীদেরকে ঢালাওভাবে গ্রেফতারের যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে শুধু গুরুতর অপরাধে লিপ্তদের কথা রয়েছে। সর্বশেষ এই বিলে গুরুতর অপরাধীদের সাথে মামুলি অপরাধে লিপ্তদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করা হলো।
ফলে বাস-রেলে বিনা টিকিটে ভ্রমণের চেষ্টা, স্টোরে ছোট খাটো জিনিস এবং বাড়ি-ঘর থেকে চুরির সময় ধরা পড়া, পকেট কাটা অথবা কাউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া, ট্রাফিক আইন লংঘনের জন্যে জরিমানা প্রদানকারিরাও ট্রাম্পের ঐ ষাড়াশি অভিযানের আওতায় এলো। আর এই বিলে রিপাবলিকান পার্টির সাথে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ৪৮ জন কংগ্রেসম্যানও ভোট দিয়েছেন।
বিলটি পাশ হয়েছে ২৬৪-১৫৯ ভোটে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, গত নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ভোটে আপামর আমেরিকানের আগ্রহে ভাটা পড়ায় সামনের মধ্যবর্তী নির্বাচনেও তার ঢেউ লাগতে পারে। এজন্যে অভিবাসী ইস্যুতে ভোটারের মন রক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে অভিবাসন বিরোধী এই বিলে উপরোক্ত ডেমোক্র্যাটরা ভোট দিয়েছেন। আরো জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের সীমানা ওপেন করায় গত চার বছরে ২২ লাখের অধিক বিদেশি ঢুকেছে আমেরিকায় এবং তাদের অনেকেই নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকায় গ্রেফতারও হচ্ছে। টেক্সাস, অ্যারিজোনা স্টেটে ঐসব অবৈধ অভিবাসীদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাসে ভরে নিউইয়র্ক, বস্টন, ফিলাডেলফিয়া, শিকাগো এবং লসএঞ্জেলেস সিটিতে অনেক বিদেশিকে পাঠানো হয়েছে। এরফলে এসব সিটির আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে খেটে খাওয়া মানুষেরাও বিব্রত। কারণ, বেআইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রমকারীদেরকে সরকারি খরচে হোটেল-মোটেলে রাখা হচ্ছে। খাদ্য ক্রয়ের জন্যে ডেবিট কার্ড প্রদান করা হয়েছে বাইডেনের নির্দেশে।
বাস্তবতার আলোকে পেনসিলভানিয়ার ডেমোক্র্যাট ইউএস সিনেটর জন ফেটারম্যান গণমাধ্যমে বলেছেন, অবৈধভাবে বসবাসরতরা সামাজিক শান্তি বিনষ্টের কারণ। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ট্যাক্স প্রদানকারীদের ওপর চাপ ফেলছে। তাই ওদের গ্রেফতার করে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার বিকল্প নেই। ইউএস সিনেটে রিপাবলিকানরা ৫৩ আসন নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও এই বিল পাশে প্রয়োজন ৬০ ভোটের। তাই অন্ততঃ ৭ জন ডেমোক্র্যাট সিনেটরকে রিপাবলিকানদের পাশে দাঁড়াতে হবে। ইতোমধ্যেই পেনসিলভেনিয়ার এই সিনেটর প্রকাশ্যে নিজের মতামত ব্যক্ত করার পর অ্যারিজোনার সিনেটর রুবেন গ্যালেগো এবং মিশিগানের সিনেটর ইলিসা স্লটকিনও নড়েচড়ে উঠেছেন। অবশিষ্ট ৪ জনকেও রিপাবলিকানরা পেয়ে যাবেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।
উল্লেখ্য বিদ্যমান আইন অনুযায়ী আইস (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট)’র পক্ষে মামুলি অপরাধে লিপ্তদের গ্রেফতার ও বহিষ্কারের ক্ষমতা নেই। এ তথ্য জানিয়েছেন জর্জিয়ার রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান মাইক কলিন্স। তিনি উত্থাপন করেছিলেন সর্বশেষ বিলটি। বিল পাসের পর গভীর সন্তোষ প্রকাশ করে কংগ্রেসম্যান কলিন্স বলেন, অপরাধে লিপ্তদের সমাজ থেকে সরাতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থেই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে অবৈধভাবে বাস করেও অপরাধে লিপ্তদের বিরুদ্ধে। অপরদিকে ওয়াশিংটনের কংগ্রেসওম্যান (ডেমোক্র্যাট) প্রমিলা জয়পাল এই বিলের সমালোচনাকালে বলেছেন, এটি আইনে পরিণত হলে অনেক নিরপরাধ অভিবাসীও গ্রেফতারের আশংকা রয়েছে। প্রতিটি মানুষেরই অধিকার রয়েছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে সকল প্রক্রিয়া অবলম্বনের। কিন্তু পাস হওয়া বিলটি সিনেটের অনুমোদন পেলে কাগজপত্রহীনরা ভয়ংকর ভীতিতে নিপতিত হবে। যা আমেরিকার নীতি-নৈতিকতার সাথে যায় না।
সামাজিক এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সীমান্তকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার আওতায় আনা তথা দক্ষিণের সাড়ে ৫০০ মাইল সীমানায় দেয়াল নির্মাণের অঙ্গিকার রয়েছে ট্রাম্পের। বেআইনীভাবে একজন বিদেশিও যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারবে না-এমন একটি ব্যবস্থায় আগ্রহী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভ্যন্তরে যেসব অবৈধ অভিবাসী রয়েছে তাদেরকেও নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার কথা ইতোমধ্যেই তিনি ঘোষণা করেছেন।