প্রকৃতি মাঝে মাঝে তার এমন রুদ্ররূপ দেখায়, যা মানব সমাজকে স্তব্ধ করে দেয়। বিশ্বজুড়ে মানব ইতিহাসে এমন কিছু সুনামি আঘাত হেনেছে, যার ভয়াবহতা সভ্যতার বুকে রেখে গেছে গভীর ক্ষতচিহ্ন। সমুদ্রের তলায় ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বা ভূমিধসের কারণে সৃষ্ট এই বিশাল ঢেউগুলো সাধারণ ঢেউয়ের চেয়ে ভিন্ন। মহাসাগর জুড়ে এই ঢেউগুলো দ্রুতগতিতে ছুটে আসে এবং উপকূলে পৌঁছে আরও দানবীয় হয়ে আছড়ে পড়ে। যখন এই জলরাশি স্থলভাগে প্রবেশ করে, তখন মুহূর্তের মধ্যে জনপদ ধ্বংস হয়ে যায়, শহর প্লাবিত হয় এবং জীবনহানি ঘটে লক্ষাধিক।
ইতিহাসের তেমন পাঁচটি ভয়ঙ্করতম সুনামি
আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সুনামিটি আঘাত হানে ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বরে। ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা উপকূলে ৯.১ মাত্রার বিশাল ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামি ভারত মহাসাগরজুড়ে ১৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ঢেউগুলো কোনো কোনো স্থানে ৩০ মিটারের বেশি উচ্চতায় পৌঁছায় এবং শত শত কিলোমিটার পর্যন্ত অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এই প্রলয়ে আনুমানিক ২ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভারত ও থাইল্যান্ডের উপকূলীয় জনপদগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
১৮৮৩ সালের ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরির সুনামি। এই মারাত্মক সুনামিটি ইন্দোনেশিয়ার ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরির প্রচণ্ড অগ্ন্যুৎপাতের কারণে সৃষ্ট হয়। আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট পাইরোক্লাস্টিক প্রবাহ সমুদ্রে পতিত হয়ে বিশাল ঢেউ তৈরি করে, যা ৩৭ মিটারেরও বেশি উচ্চতায় পৌঁছেছিল। উপকূলের বহু গ্রাম সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং এতে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। উৎসমুখ থেকে বহুদূর পর্যন্ত এই সুনামির প্রভাব অনুভূত হয়েছিল।
১৮৬৮ সালে পেরু এবং চিলির উপকূলে ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের পর সমুদ্র ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। বিশাল সুনামি আছড়ে পড়ে তীরে। প্রায় ৫০ ফুট উঁচু ঢেউগুলো প্রচণ্ড শক্তিতে উপকূলে আছড়ে পড়ে, যার ফলে আনুমানিক ২৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। উপকূল জুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে এবং বেঁচে থাকা মানুষের জীবনে এর গভীর ছাপ পড়ে।
২০১১ সালের ১১ মার্চ, প্রশান্ত মহাসাগরে ৯.০ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্প জাপানের জন্য এক ভয়াবহতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে আসে। এই ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু ঢেউ জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলে তাণ্ডব চালায়। এতে প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত হন এবং ফুকুশিমা পারমাণবিক বিপর্যয় ঘটে। ক্ষতির পরিমাণ ২৩৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোয় এটি ইতিহাসের অন্যতম ব্যয়বহুল সুনামি হিসেবে চিহ্নিত।
জাপানের ইতিহাসে অন্যতম প্রাণঘাতী সুনামি ঘটেছিল উনজেন আগ্নেয়গিরির কাছে, ১৭৯২ সালে ভূমিকম্পের কারণে সমুদ্রে ভূমিধস হওয়ায়। এই ঘটনা বিশাল ঢেউ সৃষ্টি করে, যা উপকূলীয় গ্রামগুলো ধ্বংস করে দেয় এবং প্রায় ১৫ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। এই বিপর্যয় ওই অঞ্চলের জনসংখ্যা ও অবকাঠামোতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে

