‌‘মাতৃভাষায় কথা বলে না বিশ্বের ৪০ শতাংশ মানুষ’

0

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৪০ শতাংশ মানুষ এমন ভাষায় কথা বলছেন যা তাদের মাতৃভাষা নয়। না বুঝে তারা সে শিক্ষা নিতে বাধ্য হচ্ছেন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে। কোনো কোনো দেশে এমন পরিস্থিতিতে নিপতিত মানুষের সংখ্যা ৯০ শতাংশের বেশি। 

এতদসত্বেও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্কুলে নিজস্ব ভাষা শেখার কার্যক্রমটি আত্মসম্মান পুনরুদ্ধার ও সমালোচনামূলক চিন্তা শক্তির দক্ষতা বাড়াচ্ছে এবং আন্ত:প্রজন্মীয় শিক্ষা, ভাষা পুনরুজ্জীবনসহ নিজস্ব সংস্কৃতি সংরক্ষণের দরজাও খুলে দিচ্ছে। এ অবস্থায় এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের আরেকটি প্রত্যাশা হলো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ৪ অর্জনের জন্য একটি স্তম্ভ হিসেবে বহুভাষিক শিক্ষা নীতি এবং অনুশীলনগুলো বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরা।

এবারের স্লোগান ‌’বহু ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা; প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জ্ঞান চর্চার স্তম্ভ’-র  উপর আলোচনা করেন সবাই। জাতিসংঘের ছয়টি দাপ্তরিক ভাষার পাশাপাশি বাংলা, হিন্দি ও রোমানিয়ান ভাষায় প্রদত্ত বক্তব্য ভাষান্তর করা হয়। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় উদ্বোধনী সঙ্গীত “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি” পরিবেশন করেন শ্রীচিন্ময় সেন্টারের শিল্পীরা। জাতিসংঘ চেম্বার মিউজিক সোসাইটি কর্তৃক পরিবেশিত যন্ত্রসংগীত এবং অভিবাসীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীবৃন্দের পরিবেশিত গান অন্তর্ভুক্ত ছিল। অনুষ্ঠানটি জাতিসংঘের ওয়েব টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। গ্যালারিতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ছাড়াও ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিত্বকারি বিশিষ্টজনেরা। বিভিন্ন ভাষার প্রজন্মের উপস্থিতিও ছিল লক্ষনীয়। ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারাও।

প্রধান অতিথি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিস বলেন, আসুন আমরা একটি বহু-সাংস্কৃতিক এবং বহুভাষিক বিশ্ব রচনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই-যাকে আমাদের বৈচিত্র-গর্ব এবং প্রকৃতপক্ষে শক্তির উৎস হিসাবে ব্যবহার করতে পারি। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে, মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের মধ্যদিয়ে আমরা কেবল মানব সভ্যতার সমৃদ্ধ মোজাইককে স্বীকার করিনা, প্রকৃত অর্থে সম্মান করছি মানুষের বৈচিত্র এবং পরিচয়ের একটি ঐতিহ্যকে। 

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই জাতির পিতার নেতৃত্বে শুরু হয় বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রাম, যার চূড়ান্ত পরিণতি পায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়ের মাধ্যমে। 

বাংলাদেশ মিশনের মিনিস্টার শাহানারা মনিকার সঞ্চালনায় এ আলোচনায় আরো অংশ নেন মহাসচিবের প্রতিনিধি হিসেবে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল (জিএসিএম) মোভসেস আবেলিয়ান, বাহরাইনের স্থায়ী প্রতিনিধি জামাল ফারেস আলরোয়াইয়ি, রোমানিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি কর্নেল ফারোতা, বলিভিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি দিয়েগো প্যারি রডরিগুয়েজ, দক্ষিণ আফ্রিকার স্থায়ী প্রতিনিধি ম্যাথিউ জয়িনি, অস্ট্রিয়ার উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি স্টিফেন প্রেটারহোপার, ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রুচিরা ক্যাম্বোজ, ইউনেস্কোর নিউইয়র্ক অফিসের পরিচালক ইলিয়ট মিনেচেনবার্গ, নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের আন্তর্জাতিক পরিচালক দিলিপ চৌহান প্রমুখ।  

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here