মাগুরার মহম্মদপুরে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী বড়রিয়া ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ রবিবার বিকালে ঐতিহ্যবাহী এই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে বড়রিয়া গ্রামের মাঠে নামে লাখো মানুষের ঢল। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সর্ববৃহৎ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা প্রতি বছর বাংলা পৌষ মাসের ২৮ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। এ ঘোড়দৌড়কে কেন্দ্র করে প্রায় পনের দিন ধরে চলে গ্রামীণ মেলা।
ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে মাগুরা, নড়াইল, ফরিদপুরসহ আশপাশের কয়েক জেলার মানুষ সকাল থেকেই আসতে শুরু করে। মেলা প্রাঙ্গণে নামে লাখো মানুষের ঢল। তবে শিশু-কিশোর, ছেলে-বুড়ো, নারীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের একটাই উদ্দেশ্য গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা উপভোগ করা। তাই ঝাঁজালো শীতের দুপুরে মিষ্টি রোদে দূরদূরান্ত থেকে আসা নানা শ্রেনিপেশার মানুষ মাঠের মধ্যে রাস্তার পাশে এক কাতারে সামিল হয় দু’চোখ ভরে ঐতিহ্যবাহী সেই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা উপভোগ করবে বলে।
দুপুর ২ টায় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা শুরুর আগমুহূর্তে ঘোড়ার মালিক, ফকির ও ছোয়ার ঘোড়াকে তার পথপরিক্রমা দেখাতে ব্যস্ত। এরপর শুরু হয় কাঙ্খিত সেই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। শীতের বিকালে মিস্টি রোদে অন্যরকম এক আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে লাখো দর্শক। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা শেষে মেলা কমিটির সভাপতিসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
স্থানীয়রা জানান, একশ বছরের বেশী সময় ধরে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা ও এই মেলা চলে আসছে, যা খুলনা বিভাগের সর্ববৃহৎ মেলা। এই মেলাকে ঘিরে উৎসব আমেজে মেতে ওঠে বালিদিয়া, মহম্মদপুর ও রাজাপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের ইউনিয়নের প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ। প্রায় তিন বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেলায় বসে মাছ-মাংশ, মিষ্টির দোকানসহ বাঁশ, বেত ও মৃৎশিল্পিদের তৈরী নানা রকম খেলনা ও প্রসাধনীর দোকান। এছাড়াও মোলায় আসে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রঙ-বে রঙের ফার্ণিচারের দোকান।
মেলায় আসা নানা বয়সী মানুষের হাতে দেখা যায় সাংসারিক জিনিসপত্র। এলাকার মানুষ সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে মেলা থেকে তাদের গৃহস্থালির নানা জিনিসপত্র কিনবে বলে। তবে একশ বছরেরও বেশী সময় ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী মেলার মূল আকর্ষণ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা, সাপখেলা, নাগরদোলা, ট্রেন, চরকি, পুতুল নাচ, যাদু এবং কমিডিয়ান শিল্পিদের উপস্থিতি।
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মেলা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম খাঁন বাচ্চু জানান, শত বছরের এই মেলা দেখতে আশপাশের কয়েক জেলার নানা শ্রেণিপেশার লাখো মানুষের আগমন ঘটে। প্রশাসনসহ এলাকার সকলের সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবেই মেলার কার্যক্রম প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও শেষ হয়েছে।