মহাবিপন্ন উপকারি ‘শকুন’

0

এক সময় গ্রামের তাল, বট, পাকুড় আর ডুমুর গাছের চূড়ায় বাসা বাধতো উপকারি পাখি শকুন। গাছের মগডাল কিংবা ধানি জমির আইলে স্থির বসতে দেখা যেত প্রশস্ত ডানার এ পাখিকে। উড়তো মৃত প্রাণীর সন্ধানে। সন্ধান পেলেই একে এক হানা দিতো তারা। দল বেধে প্রাণীটি ঘিরে উৎসব করে ভক্ষণ করতো মাংস। খাবার নিয়ে হট্টগোলও দেখা দিত তাদের মাঝে।

বর্তমানে গ্রামে-গঞ্জে ‘প্রকৃতির পরিচ্চন্নতা কর্মী’ খ্যাত এ পাখির বিচরণের এমন দৃশ্য এখন বিরল। বৃক্ষ নিধন, ধর্মীয় কুসংস্কার, খাদ্যের অভাব আর গবাদি পশুর উপর ক্ষতিকর ওষধের অধিক ব্যবহারের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশবান্ধব এ পাখি।       

এর শুদ্ধ নাম ‘বাংলা শকুন’। ইংরেজি নাম White-ramped Vulture। শকুনের গলা, ঘাড় ও মাথায় নেই কোন পালক। গায়ের পালক ময়লা কালচে বাদামি। প্রশস্ত ডানায় ভর করে আকাশে ওড়ে এরা। বাসা বাধে লোকচক্ষুর অন্তরালে। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ এদের প্রজননকাল। স্ত্রী শকুন ১-৩টি ডিম পাড়ে সাদা বা ফ্যাকাশে রঙের। এটি ফোটে ৪০-৪৫ দিনে। আমাদের দেশে প্রায় ৬ প্রজাতির শকুন রয়েছে। বাংলা শকুন ছাড়াও রয়েছে রাজ শকুন, গ্রীফন শকুন, হিমালয়ী শকুন, সরুঠোঁট শকুন, কালা শকুন ও ধলা শকুন। বর্তমানে মহাবিপন্ন শকুন। বড় বড় গাছ কেটে ফেলা, খাদ্যের অভাব আর গবাদিপশুতে ডাইক্লোফেনাকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে শকুন বিলুপ্তির মুখে। 

শকুন বিপন্নের কারণ জানতে চাইলে শকুন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ ন্যাচার এন্ড ন্যাচারাল রির্সোস (আইইউসিএন) বাংলাদেশ’-এর সহকারী প্রোগ্রাম অফিসার সমীর সাহা ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’কে বলেন, প্রকৃতির ঝাড়ুদার নামে খ্যাত বাংলা শকুন সারা পৃথিবীব্যাপী বিপন্ন অবস্থায় আছে। তবে বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরে শকুনের অবস্থা মোটামুটি ভাল। এই শকুন বিপন্ন হওয়ার পিছনে মূল কারণ গবাদিপশুতে ডাইক্লোফেনাক এবং কিটোপ্রোফেন নামক ওষধ ব্যবহার যদিও বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে এই ওষধগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। 

তিনি আরও বলেন, দেশে শকুনের খাবারের অভাব এবং বাসা নির্মাণের পর্যাপ্ত গাছের অভাব এদের হুমকির মূল কারণ। জলবায়ুু পরিবর্তনও এদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ভূমিকা রয়েছে। তবে এরজন্য আরো গবেষণা দরকার! খুশির খবর হচ্ছে সিলেট এবং সুন্দরবনের বাইরে পাবনার বেড়া উপজেলায় শকুনের ছোট একটি কলোনি পাওয়া গেছে এই বছর। এই কলোনি রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। যদিও আইইউসিএন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ বন অধিদপ্তর ইতিমধ্যে পাবনায় একটি শকুন সংরক্ষণ দল গঠন করেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here