মধ্যপ্রাচ্যে চীন কী পারবে যুক্তরাষ্ট্রের জায়গা নিতে?

0

৬ এপ্রিল, সাত বছরের মধ্যে প্রথমবার সাক্ষাৎ করেন সৌদি আরব ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর এক মাস আগে দুই দেশের নিরাপত্তা পরিষদের শীর্ষ কর্মকর্তাও দেখা করেছেন। দীর্ঘ শত্রুতার পর দুই প্রতিবেশীর এমন অকস্মাৎ কাণ্ডে বিশ্বের অনেক বাঘাবাঘা রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরই চোখ কপালে ওঠার দশা হয়েছে।

আর এই তুলকালাম ঘটানো কাণ্ডে পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে চীন। বেইজিংয়ের মধ্যস্থতাতেই হয়েছে এই অসাধ্য সাধন। যে কাজে এতোদিন ওমান ও ইরাক ব্যর্থ হয়েছিল। এর পাশাপাশি বিচ্ছিন্ন কাতারের সাথে একে একে আশপাশের দেশগুলোর সম্পর্কও হচ্ছে স্বাভাবিক।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে এমন সফলতা চীনকে মধ্যপ্রাচ্যে পাকা আসন গড়তে সাহায্য করছে। কেবল সেখানেই শেষ নয় চীন বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার মিশনেও নেমেছে। তারা এবার ইসরায়েল ফিলিস্তিনের সংঘাত মেটানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। আর সেই কাজটা করতে পারলে মধ্যপ্রাচ্যে আরও সুসংহত হবে চীনের স্থান। পাল্টে যাবে ওই অঞ্চলের রাজনৈতিক দৃশ্যপটও।

চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং বলেছেন, বেইজিং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত।

জার্মান ভিত্তিক বিশ্লেষক জুলিয়া গুরলো-হালার মনে করছেন, সৌদি-ইরান চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে চীনা উদ্যোগের ভবিষ্যত লঞ্চপ্যাড হিসেবে কাজ করবে। তার মতে, চীন ওই অঞ্চলে বড় ধরনের খেলায় নামতে প্রস্তুত সেই ঘোষণাই দিয়ে রেখেছে।

বিপরীতে সৌদি আরবের সাথে মার্কিন প্রশাসনের টানাপড়েন চলছে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান চীন, রাশিয়া ও ইরানের মতো বহুপাক্ষিক শক্তিকে সাথে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে আপন আধিপত্য বলয় গড়ার চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি ইরানের সাথে চুক্তির পর ইয়েমেনেও শান্তি প্রতিষ্ঠায় নেমেছে সৌদি। তুরস্কের সাথে রিয়াদের সম্পর্ক আরও স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা চলছে।

অন্যদিকে ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে আরো কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সেই সাথে বিশ্বাসযোগ্যতাও হারিয়ে ফেলেছে ওয়াশিংটন।

বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র যেসব ক্ষেত্রে ব্যর্থ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে তার সবকিছু দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বসে আছে চীন। তবে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জায়গা দখল করতে চীনের কতো বছর লাগবে, আদৌ সেটা সম্ভব কিনা উঠছে সেই প্রশ্ন।

তবে অনেক ভূ-রাজনীতি বিশ্লেষক মনে করছেন, এখনো মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জায়গা দখল করার ক্ষমতা বা সক্ষমতা অর্জন করেনি চীন। কারণ ওই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি মার্কিন সেনা ঘাঁটি আছে। যারা এখনও মিত্রদের রক্ষায় ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। তবে চীন এখনই সে ধরনের দায়িত্ব নেওয়ার মতো কিছু করার মানসিকতা দেখায়নি। বেইজিং অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ফায়দা নিতেই আগ্রহী বেশি।ৎ

ইরান ও সৌদির তেলের বড় ক্রেতা চীন। সাম্প্রতিক সময়ে এই ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক পরিধি আরও বেড়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প খোঁজা রিয়াদ-তেহরানও আরও ঝুঁকছে বেইজিংয়ের দিকে।

একই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে কিছু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প হিসেবে নিজেদের হাজির করেছে চীন। তবে তারা দীর্ঘদিন ধরে টিকিয়ে রাখা মার্কিন আধিপত্য বলয়ে আপাতত আঘাত করার চেষ্টা করছে না। প্রাথমিকভাবে অর্থনীতিকে প্রভাবিত করার পথেই হাঁটছে চীন। সেই সাথে আছে শি জিনপিংয়ের সেই পুরনো সিল্ক রুটকে নতুন করে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা।

আর এসব কর্মকাণ্ডেই দিনে দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বিপদ বাড়ছে। ওপেকভুক্ত দেশসমূহের হঠাৎ তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণাও সেই উপসর্গেরই অংশ বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।

 

সূত্র: আল জাজিরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here