ভোলায় চলতি মৌসুমে টমেটো ক্ষেতে রোগের আক্রমণে শতশত একর জমির টমেটো নষ্ট হয়ে গেছে। বিভিন্ন কীটনাশক কিংবা বালাইনাশক ওষুধ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। লাখ লাখ টাকা খরচ করে লোকসানের আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষিবিভাগ বলছে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন টমেটো চাষিরা।
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার ছোট মানিকা গ্রামের কৃষক ফরিদুল ইসলাম জানান, দুই লাখ টাকা খরচ করে এক একর জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। ফুলে ফলে ভরে উঠেছিল ক্ষেত। প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করেছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করে দেখেন টমেটোতে কালো দাগ পড়ছে এবং শক্ত হয়ে যাচ্ছে। এরপর পচে যাচ্ছে। সেই সাথে গাছের পাতা, ডগা শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। এখন দেখে মনে হয় গোটা ক্ষেত পুড়ে গেছে। দিশেহারা হয়ে পড়েন ফরিদ মিয়া। কৃষি কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির লোকজনের সাথে পরামর্শ করেছেন। কৃষিবিদরা মাঠে গিয়ে সরেজমিন দেখেছেন। যে ওষুধ দিতে বলেছেন, তা-ই দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এক একর জমির সম্পূর্ণ টমেটো নষ্ট হয়ে গেছে। একটি টমেটোও বিক্রি করতে পারেননি তিনি।
কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ৯৫ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের টমেটোর আবাদ হয়েছে। কৃষকরা জানান, প্রায় সবগুলো ক্ষেতই এই রোগে আক্রান্ত হয়। বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক দিয়েও ফসল রক্ষা করতে পারেননি কৃষকরা। তারা জানান, অজ্ঞাত এই রোগের বিষয়ে কেউ তাদের কোনো কার্যকরী পরামর্শ দিতে না পারায় চাষিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোবিন্দ মন্ডল জানান, বৃষ্টি এবং কুয়াশার কারণে টমেটো ক্ষেতে রোগের আক্রমণ হয়েছে। কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যারা পরামর্শ মেনে ওষুধ প্রয়োগ করেছে, তাদের ক্ষতি কিছুটা কম হয়েছে।
এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ করে টমেটো ক্ষেতে এই রোগের আক্রমণ হয়েছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদ এনজিও ব্যক্তিত্ব মো. শেখ ফরিদ। দীর্ঘদিন ধরে কৃষি, পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শেখ ফরিদ জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা পৃথিবীতেই কৃষির উপর একটা বিরূপ প্রভাব পড়েছে। দিন রাতের তাপমাত্রার তারতম্য দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, টমেটোসহ আরও এমন অনেক ফসল রয়েছে যা রক্ষা করতে হলে গ্রিন হাউজ সিস্টেমে যেতে হবে।
একই কথা বলেছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাসান ওয়ারিসুল কবীর। তিনি বলেন, জেলায় চলতি মৌসুমে ১০ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজির আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে টমেটো উল্লেখযোগ্য একটা জায়গা দখল করে আছে। কিন্তু রোগের আক্রমণে টমেটো চাষিদের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অসময়ে বৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য এবং কুয়াশার কারণে টমেটো ক্ষেতে রোগ হয়েছে। তবে নিয়মিত পরিচর্যা এবং ছত্রাকনাশক প্রয়োগের ফলে রোগের আক্রমণ কিছুটা কমেছে। বাজার দর যেহেতু ভালো, তাই কিছুটা ক্ষতি হলেও আশা করা যাচ্ছে কৃষকরা তাদের এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন।