ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তিনি দেশত্যাগ করতে পেরেছেন। দীর্ঘ এক বছর আত্মগোপনে থাকার পর নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নরওয়ের রাজধানী অসলে সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) অসলোতে সাংবাদিকদের মাচাদো বলেন, নিজের ও সহযোগীদের নিরাপত্তার কারণে কীভাবে দেশ ছাড়লেন—সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে তিনি রাজি নন। তার দাবি, যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভেনেজুয়েলা ছাড়তে সহায়তা করেছে। তবে এ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। অসলোতে পৌঁছানোর পর স্থানীয় ভেনেজুয়েলানরা তাকে ঘিরে জাতীয় সংগীত গেয়ে ও ‘স্বাধীনতা-শান্তি’ স্লোগান তুলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরপরই আত্মগোপনে চলে যান মাচাদো। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, সরকারি হুমকি ও দমন-পীড়নের মধ্যেও নির্বাচনে মাচাদো-সমর্থিত প্রার্থী বিপুল ভোটে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাদুরোকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনের পর বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর দমননীতি আরও জোরদার হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
মাচাদো জানান, তার অবস্থান ভেনেজুয়েলার সরকার জানলে নরওয়ে যাওয়ার পথেই তাকে বাধা দেওয়া হতো। নোবেল শান্তি পুরস্কার তিনি নিজে গ্রহণ করতে পারেননি, তবে তার মেয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, ভেনেজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিওসদাদো কাবেয়ো দাবি করেছেন, সরকার শুরু থেকেই মাচাদোর গতিবিধি জানত। সরকারি কর্মকর্তারা আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন—দেশ ছাড়লে তাকে ‘পলাতক’ বিবেচনা করা হবে।
দেশে ফেরার বিষয়ে অনিশ্চয়তার কথাও বলেন মাচাদো। বর্তমান সরকারের অধীনে ভেনেজুয়েলায় ফিরে গেলে গ্রেপ্তারের ঝুঁকি রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। তা–সত্ত্বেও দেশত্যাগের সিদ্ধান্তকে তিনি ‘সার্থক’ বলে মন্তব্য করেন।
ভেনেজুয়েলাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ও কূটনৈতিক চাপ আরও বাড়িয়েছে। সম্প্রতি দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির উপকূল থেকে একটি তেলের ট্যাংকার জব্দের ঘটনায় এই চাপ তীব্র হয়। সরাসরি মন্তব্য না করলেও মাচাদো ওয়াশিংটনের পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, মাদুরো সরকারের অর্থের উৎস বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নোবেলজয়ী এই বিরোধী নেত্রী জানান, আপাতত তিনি নিজের চিকিৎসা, দলের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ পুনর্গঠন এবং তিন সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানোতে মনোযোগ দেবেন। ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি কিছু জানাননি।

